কথাটা রমজান। রামজান না। আর শ্রীরামচন্দ্রের সাথে ও দূর দূরান্তর অবধি কোন সম্পর্ক নেই তবু ও কয়েক বছর ধরেই দেখছি আশেপাশের বেশ কিছু মানুষ স্রেফ রামাদানেরই শুভেচ্ছা বিনিময় করছে ফেসবুকে হোয়াটসঅ্যাপ এ। রমজানের কথা খুব কম মানুষই বলছে দেখি। অথচ মনে করে দেখুন, কয়েক বছর আগে অবধি রমজানই ছিল আমাদের। যেমন এই উপমহাদেশের নিজস্ব কিছু গল্প ছিল যা আরব্যরজনীর চেয়ে আলাদা।
রমজান শব্দটা এসেছে পারস্যদেশের ভাষা থেকে। আর রামাদান সৌদি আরব থেকে। ঐতিহাসিকভাবে ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলমানদের ভাষা পারসি, উর্দু বা বাংলারই প্রধানত। উপমহাদেশে মোগল সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে সুফিবাদ আর ফারসিক প্রভাব বেশি করে আসতে শুরু করে। আল্লাহহাফিজ যেমন এখানে খুদাহাফিজ পারস্য প্রভাবে। কিন্তু ক্রমশ গোটা উপমহাদেশে জুড়ে ওয়াহাবি সংস্কৃতি গ্রাস করতে শুরু করে। উগ্রতা, কট্টরপন্থা ও। অথচ আদর্শ মানুষ তথা খাঁটি মুমিন হওয়ার জন্য কোরান শরিফে বর্ণিত গুণাবলির মধ্যে ক্ষমা ও উদারতাকে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে কোন আগ্রাসন বা সাম্রাজ্যবাদের প্রথম লক্ষ থাকে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত আগ্রাসন। হয়তো আরব ঠিক সেটাই করছে আমাদের এই কয়েকটা দেশ জুড়ে। আর তাই আরো বেশী করে শুনতে পাচ্ছি আরবী শব্দ বাংলাভাষী মানুষদের মুখে।
তাই হয়তো মাসি, পিসি, জল, হাওয়াগুলো আসমান, পানী, খালা, ফুফাতেই বেশী করে আটকে পরছে। আর আমরা নিজের নিজের ধর্মীয় বেড়াজালে বন্দী হয়ে পরছি।
সৌদি আরব গোটা পৃথিবী নয়। তার যেরকম একটা সংস্কৃতি আছে, আপনার নিজের ও একটা সংস্কৃতি আছে আর তার সাথে আপনার ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন দ্বন্দ্ব নেই। ঠিক যেমন মুসলিম হলে ও আপনি একজন বাঙালি, বিহারী, মালায়লি বা ভারতীয়। প্রত্যেকটা অংশ আপনার, আমাদের সকলের।
আত্মশুদ্ধির এই পবিত্র মাসে আসুন আমাদের ঐতিহ্যগুলো সগর্বে বহন করি। আমাদের ভাষা, আমাদের সংস্কৃতি, জাত্যাভিমান, আম্মির হলুদমাখা আঁচল, আব্বার গুনগুন করে সাঁইয়ের গান গাওয়াটা ও আমারই ইবাদতের অংশ। আমার শষ্য শ্যমলা মাতৃভূমির মতোই। বিদেশী মরুভূমির মধ্যে এক চিলতে জলের হাতছানিতেই দৌড়োতে যাবো কেন শুধু? মানবজমিন সাধনার এই বোধ যতদিন আমাদের মধ্যে থাকবে আমাদের কোন শক্তি আলাদা করবে আগুন লাগিয়ে?
ছোট বিধর্মী মুখে অনেক বড় বড় কথা বলে ফেললাম। ক্ষমা করবেন। পারলে এক কাফেরের গান শুনবেন।
এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে/
যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান,
জাতি গোত্র নাহি রবে।।
ধর্ম কুল গোত্র জাতির/
তুলবে না গো কেহ জিগির।
কেঁদে বলে লালন ফকির,
কেবা দেখায়ে দেবে।
রমজান মুবারক হো ♥!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত