ভোটের দফা যত এগোচ্ছে, ততোই নিজের অসৌজন্যতার রাজনীতির পরিচয় দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যেমন শনিবার উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দু’দশক পুরনো বফর্স প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে মোদী বলেন, “আপনার বাবা তাঁর কাছের মানুষদের জন্য ‘মিস্টার ক্লিন’ হতে পারেন। কিন্তু তাঁর জীবন শেষ হয়েছে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান’ হয়ে।” স্বাভাবিকভাবেই ভাবেই প্রাক্তনের উদ্দেশ্যে বর্তমানের এমন মানহানিকর মন্তব্যে দেশ জুড়ে উঠেছে নিন্দার ঝড়। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে নিয়ে মোদীর মন্তব্যের সমালোচনায় নামলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে স্যাম পিত্রোদার মতো কংগ্রেস নেতারা।
তাঁর বাবাকে মোদী ‘এক নম্বর দুর্নীতিবাজ’ বলে কটাক্ষ করায় জবাবে সৌজন্য দেখিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইট করে ‘প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন’ জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে মোদীকে কর্মফলের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। তবে রাহুলের পথে না হেঁটে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণের রাস্তা বেছে নিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিক শিক্ষা পাননি উনি। রাজনৈতিক ও বাস্তববোধের অভাব রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।’ সোমবার কালবুর্গিতে সাংবাদিকদের খাড়গে বলেন, ‘মোদীর মধ্যে সংস্কার বলে কোনও বস্তু নেই। আসলে ছোটবেলায় ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ায় সঠিক শিক্ষা হয়নি। আর কোথা থেকেই বা সংস্কার শিখবেন? কথা বলার সময় কীভাবে জিভের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়, তা শেখা উচিত।’
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন যে, ‘মোদী সবসময় আবেগ নিয়ে খেলার চেষ্টা করেন। আর অযথা মিথ্যা কথা বলেন। দেশের একতার জন্য শহীদ এক ব্যক্তিকে উনি অপমান করেছেন। মোদীর মধ্যে কোনও দেশভক্তি, হৃদয় নেই। উনি ভোটে জয় পেতে যা খুশি করতে পারেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মিথ্যা কথা বলা ছাড়া দেশের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কোনও ভূমিকা নেই।’ অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদাও একই ইস্যুতে মোদীর বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীর জন্মভূমি গুজরাত থেকে এই মন্তব্য ভাবাই যায় না। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী দেশের জন্য সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছেন। সর্বোচ্চ পদে থেকে তাঁকে নিয়ে এমন মন্তব্য অবিশ্বাস্য।’
উল্লেখ্য, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করতে গিয়ে মোদী শালীনতার সমস্ত সীমা ছাড়িয়েছেন বলে আগেই টুইট করেছিলেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মোদীর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উদ্দেশ্যে এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন রাজীবজি। মাতৃভূমির জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁর প্রতি এমন ভাষার প্রয়োগ এবং এই ধরনের মন্তব্য করার আস্পর্ধার তীব্র নিন্দা করি।’
আর এবার গান্ধী পরিবারের পরামর্শদাতা তথা কংগ্রেসের বিদেশ শাখার প্রধান পিত্রোদা বলেন, ‘রাজীব গান্ধী যখন কংগ্রেসের সভাপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। মানুষকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আমরা আজ যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি, তার সূচনা হয়েছিল রাজীব গান্ধীর আমলে। তিনি মানুষের কাজের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।’ অন্যদিকে, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও রাজীব ইস্যুতে মোদীকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এধরনের ‘নিম্নমানের’ মন্তব্য আশা করা যায় না। মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনা (এমএনএস)-কেও মোদীর বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায়।