নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি ভাঙার একাধিক অভিযোগ ওঠার পরেও প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদীকে ক্লিনচিট দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রীকে ছাড় কেন? তবে কি তাঁর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে কমিশন? এমনই সব প্রশ্ন তুলে কমিশনের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধীরা। সকলেরই এক অভিযোগ, ওই একই অভিযোগে শাস্তি পেয়েছেন অন্য নেতারা। কিন্তু ছাড় দেওয়া হচ্ছে মোদীকে। ঠিক কোন যুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে বেকসুর ছাড় দেওয়া হচ্ছে, কমিশনের আইনজীবীর কাছে এবার সে কথাই জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়ের নির্দেশিকা সঙ্গে না থাকায় আগামী বুধবার মামলার পরবর্তী শুনানির দিন সেই কাগজ আদালতকে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কমিশন।
এরই মধ্যে গত শনিবার উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ে রাজীব গান্ধী সম্পর্কে যে কুকথা প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তার ভিত্তিতে ফের নতুন অভিযোগ কমিশনের কাছে দায়ের করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। জানা গেছে, শুধু এপ্রিল মাসেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্তত গোটা দশেক অভিযোগ কমিশনের কাছে করেছিলেন বিরোধীরা। অভিযোগ, শুরুতে সেগুলি নিয়ে বসেই ছিল কমিশন। অবশেষে চতুর্থ দফার ভোটের পর কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, জানতে চেয়ে শীর্ষ আদালতে একটি আবেদন করেন। তার পরেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিষ্পত্তি করা শুরু করে কমিশন। দশটির মধ্যে ছ’টি অভিযোগের শুনানি শেষে প্রধানমন্ত্রী ক্লিনচিট পান। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও ক্লিনচিট পান দু’টি অভিযোগে।
যদিও প্রধানমন্ত্রীকে ক্লিনচিট দেওয়া নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তিন মুখ্য কমিশনারের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে উপমুখ্য নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা বলেন, ‘তিন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে মতপার্থক্য হতেই পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে।’ গতকাল শুনানিতে কমিশন কর্তাদের মতপার্থক্যের উল্লেখ করে সুস্মিতার আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি প্রধানমন্ত্রীকে যে ছ’টি অভিযোগ থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত পাঁচটি অভিযোগে মোদীকে একতরফা ছাড় দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন এক নির্বাচন কমিশনার। ওই একই শব্দ ব্যবহার করায় অন্য নেতা-নেত্রীদের শাস্তি শুনিয়েছে কমিশন।’
আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা হওয়া উচিত, তা নিয়ে একটি গাইডলাইন বানিয়ে দেওয়ার জন্যও আদালতের কাছে আবেদন করেন সিঙ্ঘভি। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ তখন প্রধানমন্ত্রীকে কোন যুক্তিতে ছাড় দেওয়া হল, তার লিখিত নির্দেশ দেখতে চায়। কমিশনের কাছে তা না থাকায় বুধবার তা আদালতকে জমা দিতে বলা হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যেই কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিরোধীরা, তবে আগামী বুধবারের শুনানির দিকে যে সকলেরই নজর থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।