কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাসে বাঙালির প্রধান তিনটি উৎসবের মধ্যে মাঝের উৎসব হল অক্ষয় তৃতীয়া। প্রথমটি হল পয়লা বৈশাখ আর শেষেরটি রবীন্দ্র জয়ন্তী। প্রধানত এই দিনটিকে শুভ বলে মানে বাঙালি। আর তাই এই দিনে ব্যবসায়ীরা লক্ষী গনেশ পুজো করে নতুন বছরকে নতুন করে শুরু করেন। আর বাঙালি মানেই খাদ্যরসিক। তাই পয়লা বৈশাখের মতো অক্ষয় তৃতীয়ায় ও মানুষ ভীড় জমায় মিষ্টির প্যাকেট আর ক্যালেন্ডারের জন্য। যদিও ব্যস্ত শহরে এই পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়ার ক্রেজ কমছে, কিন্তু বাঙালির কিছু ঐতিহ্য থেকেই যায়। তেমনই যুগ যুগান্ত ধরে চলে আসা অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই যাবে।
খাদ্যপ্রিয় বাঙালির বিকেলের মিষ্টির দিকে যতোই নজর থাকুক, তবুও এইদিনের কিছু পৌরানিক কাহিনী আছে, আছে কিছু তিথি নিক্ষত্রের ব্যাপার। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে, এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল। এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই দিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
যদিও আধুনিককালে এই তিথিতে সোনার বা রূপার গয়না কেনা হয়। মনে করা হয়, এই শুভ তিথিতে রত্ন বা জিনিসপত্র কিনলে গৃহে শুভ যোগ হবে। সুখ-শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধি হবে, এই আশাতেই এদিন মানুষ কিছু না কিছু কিনে থাকেন। অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। এই অক্ষয় তৃতীয়াকে অক্ষা তিজও বলা হয়। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। এই অক্ষয় তৃতীয়ার শুভদিনে জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণুর অবদান পরশুরাম। এদিনই সত্য যুগের শেষ হয় ত্রেতা যুগের সূত্রপাত হয়।
এই শুভদিনে মানুষজন সোনা কেনেন, তাই সোনা ব্যবসায়ীদের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব কিছুটা হলেও বেশি। সোনা ব্যবসায়ীরা আশা করছেন এই অক্ষয় তৃতীয়ায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ব্যবসা বৃদ্ধি হবে। এর পরে পরেই বিয়ের বাজার। আর তাতেও সোনা কেনায় আগ্রহ বাড়বে ভারতীয়দের। ফলে বিক্রিও বাড়বে। এই মুহূর্তে দেশে সোনার দাম যেমন কমছে না, তেমন খুব বেশি বাড়ছেও না। দামে একটা স্থিতি রয়েছে। আর এতেই ব্যবসা ভাল হওয়ার আশা। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিল এর চেয়ারম্যানে নীতিন খান্ডেলওয়াল সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, “দর স্থিতিশীল হওয়ায় সব মিলিয়ে বাজারে সোনার উপরে মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে। এর ফলে মনে হচ্ছে গত বছরের তুলনায় সোনার ব্যবসা এই অক্ষয় তৃতীয়ায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে”।