মোদীর নোটবন্দী, জিএসটি–র জ্বালায় জরি শিল্প এখন অন্ধকারে। বাংলার জরিশিল্পের খ্যাতি ছিল সারা দেশে। কিন্তু এখন মজুরি কমেছে, সমস্যায় পড়েছেন মহিলা কারিগরেরা। পাঁচলা গ্রামের জরিশিল্পীদের তৈরি কাজ যেত বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, মু্ম্বই। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। বিজেপি সরকারের জিএসটি আসার পর অন্ধকার নেমে এসেছে এই শিল্পের ওপর। জরিশিল্পীদের ব্যবসা এখন লাটে। কেন কমল কাজ ও মজুরি? এলাকার বাসিন্দারাই বলছেন, ছবিটা বদলে গিয়েছে ২০১৬ সালে নোটবন্দির পর। সে বছরের নভেম্বরে এক ধাক্কায় বাতিল হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার কাজ। মহাজনদের থেকে কাজ পাননি ওস্তাগরেরা। ওস্তাগরদের থেকে কাজ জোটেনি কারিগরদের। পাশাপাশি দিল্লী, মুম্বই থেকেও কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছিলেন বহু পুরুষ। ফলে সম্প্রতি কাজ কিছুটা ফিরলেও কাজের লোক বেড়েছে। আর চাহিদা ও জোগানের নিয়ম মেনেই কমেছে মজুরি। বেশি সমস্যায় পড়েছেন মহিলারা।
গাববেড়িয়া গ্রামের আয়েশা ১০ বছর বয়সে জরির কাজে হাতখড়ি। নবম শ্রেণির পরে আর স্কুল যাওয়া হয়নি। মাটির ঘরে কারচোপে হেলান দিয়ে আয়েশা বললেন, ‘‘বর্ষার আগে ঘরের চাল ঠিক না করলে জরির কাজের কাপড়-জামা কোথায় রাখব জানি না। পোশাকে জল পড়লে আর বরাত পাব না।’’ বরাত বলতে ব্লাউজ, জামার হাত ও গলায় জরি বসানোর মতো ছোট ছোট কাজ। কাজ প্রতি মজুরি মাত্র ২৫ টাকা। এখানেও সমস্যায় মেয়েরা। কারণ, ওস্তাগরের কাছ থেকে বড় কাজের বরাত মূলত পুরুষেরাই নিয়ে আসেন। আয়েশা জানান, মা-মেয়ের সংসারে সেই সুবিধা নেই।
এ ভাবেই ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন জরি শিল্পের সঙ্গে জড়িত মহিলা কারিগরেরা। সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মুজিবর রহমান মল্লিকের দাবি, শুধু নরেন্দ্র মোদীর নোটবন্দী নয়। তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর ফলেও সমস্যা বেড়েছে হাওড়ার ৬০০ বছরের পুরনো জরি শিল্পের। যা ছন্দে ফিরতে পারেনি এখনও। মুজিবর জানালেন, অনেকেই বাধ্য হয়ে বাপ-ঠাকুরদার কাজ ছেড়েছেন। ভিন রাজ্যে গিয়ে দিনমজুরি করছেন। জরিশিল্পের এই সর্বনাশের মূলে জিএসটি বলেই, জরিশিল্পীরা এখন দুটো ভাতের জন্য বিভিন্ন কল–কারখানায় কিংবা নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোনও ক্রমে দিনযাপন করছেন। পাঁচলা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শেখ মুজিবর রহমান বললেন, “মানুষ মোদীকে সঠিক জবাব দিতে মুখিয়ে আছে”।