গত ১১ এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। সাত দফার মধ্যে ইতিমধ্যেই সাঙ্গ হয়েছে ৪ দফার ভোট। বাকি এখনও ৩ দফা। তা ঘিরেই চড়ছে রাজনীতির পারদ। তৈরি হচ্ছে নানা রাজনৈতিক সমীকরণ। যেমন এ রাজ্যের পাশাপাশি এবার উত্তরপ্রদেশের লোকসভা নির্বাচনেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি চর্চিত বিষয়।
যোগী রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে সীতাপুরের গ্রামবাসী থেকে লখনউ শিশমহলের কাছে টাঙ্গেওয়ালা; বিজেপি, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির প্রদেশ কার্যালয়, অটোচালক, দূরপাল্লা বাসের চালক— সব জায়গাতেই একটিই প্রশ্ন, উধর কেয়া হোগা। ওখানে তো মমতাজিকা গড়। বিজেপি সুবিধা করতে পারবে? আসলে উত্তরপ্রদেশের মানুষ জানে, অখিলেশ যা করেছিলেন সেটা আরও ভাল ভাবে মমতাদি বাংলায় চালু করেছেন। সব ছাত্রছাত্রী সাইকেল, স্কুলব্যাগ, জুতো, পোশাক পেয়েছে। এতটা অখিলেশ করেননি। যোগী তো নয়ই। বিয়ের টাকা এখানে সবাইকে অখিলেশও দেননি। গ্রামের রাস্তা মমতাজির রাজ্যে বহুগুণ ভাল। তাই তাঁরাও মনেপ্রাণে চান, সে রাজ্যে সপা-বসপা জিতুক, আর বাংলায় গেরুয়া ঝড়কে রুখে দিক মমতা।
২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফার ভোটের দিন সকালবেলায় অখিলেশের পার্টির জনসংযোগ আধিকারিক আশিস যাদব জানান, তিনি আপাতত কনৌজে ডিম্পল যাদবের কেন্দ্রে ব্যস্ত। তবে তাঁর মনেও উঁকি মারছে এই প্রশ্ন, কলকাত্তা কি কেয়া হাল? আবার ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে কানপুরের চামড়ার কারবারিরা মমতার ভোটের দিকে অন্য কারণে তাকিয়ে আছেন। তা হল ট্যানারি ব্যবসা। এই ব্যবসার তিনটি প্রধান কেন্দ্র চেন্নাই, কানপুর, কলকাতা। কানপুর ও কলকাতার মধ্যে ভাষা ও খাদ্যগত দূরত্ব কিংবা অমিল কম। চীনাদের বাদ দিলে দু’জায়গাতেই এই ব্যবসায় ব্যস্ত মূলত অবাঙালি হিন্দিভাষী মুসলমানরা। জানা গেছে, বিজেপির নগর নিবাস এদিকে বিশেষ নজর দেয় না।
ট্যানারির এক শ্রমিক আমজাদ আলি বললেন, গরুকাটা নিষিদ্ধ। এমনকি অন্য রাজ্যেও নিয়ে যাওয়া যাবে না। আওয়ারা গরুর জন্য, শহরে, গ্রামে কোথাও গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে। কাঁচা চামড়ার আকাল। তার ওপর গঙ্গা দূষণের নামে নানা ফতোয়া। এই তো প্রয়াগে কুম্ভমেলার সময় ৬ মাস ট্যানারি বন্ধ ছিল। ৬০০০ কোটি টাকার ব্যবসা নষ্ট। যদি মমতাদির রাজ্যে বিজেপি মাথা তুলতে না পারে তো, আমরা সেখানেই চলে যাব। কিন্তু বাংকায় যদি বিজেপি বাড়ে? সে আশঙ্কা উড়িয়ে দিলেন এক সিপিএম কর্মী অরুণ সিং ঠাকুর। এক সময়ের এসএফআই নেতা বলেন, ওখানে মমতা বিজেপিকে আটকে দিয়েছেন। আমরা দুর্বল। কিন্তু ওঁর শক্তি আছে।
গঙ্গা দূষণের অভিযোগে কানপুরের ২৬০টি ট্যানারি গত নভেম্বর থেকে বন্ধ। আরও ২৫০টি সপ্তাহে তিনদিন কারখানা চালু রাখতে পারছে না। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ১২ হাজার কোটি টাকার অর্ডার চলে গেছে। উত্তরপ্রদেশ লেদার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের দুই কর্তা ইফতিকার আমিন এবং হাফিজুর রহমান জানালেন, বাংলা সুযোগ দিচ্ছে। অনেক কোম্পানিই যাওয়ার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ট্যানারি মালিক বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শোনা যাচ্ছে, কানপুরের চর্মশিল্পে সক্রিয় দুই বড় ব্র্যান্ড রেড টেপ এবং লি কুপার-ও মমতার রাজ্যে চর্মশিল্পে বিনিয়োগের জন্য আবেদন করেছে।