পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পর থেকেই ক্রমশ পায়ের তলার মাটি আলগা হচ্ছে পাকিস্তানের। আর এবার আন্তর্জাতিক স্তরে আরও কোণঠাসা হওয়ার পথে পাকিস্তান। উল্টোদিকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে খুব বড় সাফল্য পেল ভারত। দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে হওয়া সবচেয়ে বড় জঙ্গী হামলার আড়াই মাসের মাথায় জইশকে সবচেয়ে বড় প্রত্যাঘাতটা করল ভারত। শুধু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাফল্য নয়, খুব বড় কূটনৈতিক জয়ও সূচিত হল ভারতের জন্য। শেষমেশ জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়ে দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ।
প্রসঙ্গত, মাসুদকে বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ করে দেওয়ার এই প্রয়াস বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে আসছিল নয়াদিল্লী। ক্রমশ সমর্থন বাড়ছিল ভারতের প্রস্তাবের পক্ষে। আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স— আগেই মাসুদের বিরুদ্ধে ভারতের বক্তব্যকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের আর এক স্থায়ী সদস্য চিন বেঁকে বসছিল বারবার। আবার ২০১৬ সালে পাঠানকোটে বায়ুসেনার ঘাঁটিতে জঙ্গী হানার পর থেকে আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। কিন্তু বার বার তা আটকে গিয়েছে পাকিস্তানের ‘মিত্র’ চিন ভেটো দেওয়ায়। তবে সে বাধাও এবার সরে গেল সামনে থেকে। চিন আর ওজর-আপত্তি তুলল না। ফলে মাসুদ আজহার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষিত হল। এবং সেইসঙ্গে দু’দশকের আখ্যান যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করল।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে তালিবান-শাসিত তদানীন্তন আফগানিস্তানের কন্দহর বিমানবন্দরে আটকে রেখেছিল এই মাসুদের শাগরেদরা। মাসুদের মুক্তির বিনিময়ে পণবন্দি বিমান ফিরে পায় ভারত। সেই থেকে নিরন্তর প্রয়াস নয়াদিল্লির তরফে ছিল মাসুদকে কোণঠাসা করার জন্য। কুড়ি বছর পেরিয়ে এসে মৌলানা মাসুদ আজহারকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেওয়া গেল। মাসুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রশ্নে যে সব দেশ বার বার ভারতের পাশে দাঁড়াচ্ছিল, সেই আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি আন্তর্জাতিক সমীকরণে যে মেরুতে অবস্থান করে, চিনের অবস্থান তার ঠিক বিপ্রতীপে। এই দুই মেরুকে একবিন্দুতে আনতে পারা মোটেই সহজ কথা ছিল না তা বলাই বাহুল্য।