অভয় সরকার রোড ভবানীপুরে, এখন সেখানকার বাসিন্দা অনিরুদ্ধ। বছর ৪০ আগে উড়িষ্যার বালেশ্বরের সোরো থানার তালপড়ি গাঁয়ের বাসিন্দা ছিলেন। জীবনের ঘোর প্যাঁচে পড়ে বুঝেছিলেন আয় না করলে সংসার চলবে না। তখন এসেছিলেন কলকাতায়। তখন থেকেই এখানে। বয়স বাহান্ন হয়ে গেলেও এখনো কেউ ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে আর তালপাড়ি, সোরো বা বালেশ্বরের নাম বলে না, বলে ১৭এ অভয় সরকার রোড, কলকাতা– ৭০০০২০।
কলকাতায় অজস্র উড়িয়াভাষীদের বস্তি। ভবানীপুরেই গোটা চারেক— সুহাসিনী গাঙ্গুলী সরণির পাশে, নর্থ চক্রবেড়িয়া রোডে, রাজেন্দ্র রোডে (গাঁজা পার্কের পাশে), ল্যান্সডাউন মার্কেটের পেছনে, পদ্মপুকুরের এক কোণে। যদুবাবুর বাজারের পেছনে ‘বলরাম মল্লিক রাধারমণ মল্লিক–এর বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের পেছনের গলি। আর গলির সামনেই জগন্নাথ দেবের মন্দির সংলগ্ন দৈপীঠে বিখ্যাত উড়িয়া ভাষীদের বস্তি। সেখানেই থাকেন অনিলের মত অনেকে। শ্যামবাজারেও মস্ত বস্তি। বেহালাতে, টালিগঞ্জে, চণ্ডী ঘোষ রোডের শেষে ওয়ারলেস মাঠের ধারে। কেউ গাড়ির মিস্ত্রী, কেউ জল কলের। কলকাতা পুরসভার ময়লা জলের নালা ও পাইপ ওড়িয়া মিস্ত্রীদের নখদর্পণে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে মোহিত সকলেই। বাংলায় থেকে মানুষ জীবিকা অর্জন করে শান্তিতে বাস করছেন। তাই বাংলাকে ছেড়ে থাকতে পারেনি উড়িষ্যার মানুষেরাও। এক ব্যক্তি জানালেন, দিদির রাজ্যে সুখেই আছেন। উত্তর উড়িষ্যার মানুষ কটক, ভুবনেশ্বর বা গঞ্জামের চেয়ে মেদিনীপুর ও কলকাতাকেই নিজেদের ঘর বাড়ি মানেন। বছর বিশেক আগে ওড়িয়া সংবাদপত্রে একটা সার্ভে রিপোর্ট বেরিয়েছিল। যা পড়ে অনিল জেনেছিল ২০০০ সালেও কলকাতায় ওড়িয়াদের সংখ্যা ছিল ৪.৮২ লক্ষ। গত বিশ বছরে সব বদলে গিয়েছে। অনিলের বড় ছেলে প্রতাপ (২৬) কেওনঝড়ের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মাইনিং পাশ করে জাজপুরে ভূষণ স্টিলের অফিসার আর ছোট বিদ্যাধর (২২) সম্প্রতি কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করে পরের স্টেপ নিয়ে ভাবছে। তাই আজও উড়িষ্যা নয়, অনিলদের মতে, কলকাতাই পূর্ব ভারতের বৃহত্তম বাজার। উড়িষ্যায় পর্যটকদের বড় অংশই যায় কলকাতা থেকে। তাই অনিলরা আঁকড়ে আছে কলকাতাকে।