মোদী সরকারের ‘আচ্ছে দিন’, শিল্পের ক্ষেত্রে কালো দিন। বিজেপি জমানায় এই মুহূর্তে ধুঁকছে দেশের অর্থনীতি। সেইসঙ্গে শ্লথ হয়ে পড়েছে ভারতের শিল্পোন্নয়নের গতিও। তাই জুন মাসে যে নতুন সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে, তারা বলিষ্ঠ কিছু সংস্কার ঘটিয়ে শিল্পের বৃদ্ধি ফের ত্বরান্বিত করবে, এখন এই আশাতেই দিন গুনছে দেশের বণিকমহল। এবং জোট সরকার ক্ষমতায় এলেই দ্রুত সেই পথে যাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কেন্দ্রে জোট সরকার হলে জাতীয় অর্থনীতি ধাক্কা খাবে? কে বলেছে? পাল্টা জানতে চাইলেন দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা। বুধবার মু্ম্বইয়ে ছিল ভোট। ভারতীয় অর্থনীতির তাবড় স্তম্ভ যাঁরা, তাঁরা প্রত্যেকেই দাঁড়িয়েছিলেন ভোটের লাইনে। ভোট দিয়ে বেরিয়ে তাঁদের সবার মুখে জোট সরকারের কথা। এই প্রথম, এত খোলাখুলি। এবং একদলীয় শাসন চলে গিয়ে বহুদলীয় জোট সরকারে এলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হবে বলে যে অপপ্রচার চলছে, সেই ভুল তত্ত্বও নস্যাৎ করে দিলেন সকলে।
মাহিন্দ্রা শিল্পগোষ্ঠীর প্রধান আনন্দ মাহিন্দ্রা যেমন সরাসরি বলেই দিলেন, ‘জোট সরকারকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। অগ্রগতি এবং উন্নতির ভাইরাসে সবাই আক্রান্ত। যদি কোনও জোট ক্ষমতায় আসে, তার পরেও অর্থনীতি একই রাস্তা ধরে এগোবে। জোট এলে বরং সুবিধেই হবে।’ জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দালও ভোট দিয়ে বেরিয়ে আনন্দ মাহিন্দ্রার কথারই প্রতিধ্বনি করলেন।
তিনি স্পষ্ট বলেন, এর আগেও জোট সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারা যথেষ্ট ভাল প্রশাসন চালিয়েছে। কাজেই কোনও সমস্যা নেই। কারণ গণতন্ত্র হিসেবে ভারত এখন যথেষ্ট পরিণত। তবে জোট সরকারকে মজবুত এবং স্থায়ী হতে হবে। যাতে উন্নয়নের কর্মসূচি চালু থাকে। শিল্পের বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, চাকরির নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলি নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারকেই নিতে হবে। জোট সরকারের মজবুতির ওপর জোর দিয়েছেন গোদরেজ শিল্পগোষ্ঠীর প্রধান আদি গোদরেজও। বলেছেন, জোটের মধ্যে বাঁধন শক্তপোক্ত থাকলেই হল। তা হলে আর কোনও চিন্তা নেই।
এর আগে দেশের সবথেকে বিত্তবান শিল্পপতি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান মুকেশ আম্বানী এবং দেশের সবথেকে ধনী ব্যাঙ্কমালিক উদয় কোটাকও প্রকাশ্য বক্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন মুম্বই দক্ষিণের কংগ্রেস প্রার্থী মিলিন্দ দেওরাকে। এবং দেশের বণিক মহলের অধিকাংশেরই ধারণা, এবারের সাধারণ নির্বাচনে কোনও একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সেক্ষেত্রে বহুদলীয় জোট ক্ষমতায় এলেও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রক্রিয়া যাতে চালু থাকে, উৎপাদন যাতে জোরদার হয়, নতুন পুঁজি তৈরি হয় এবং ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে— এগুলোই একমাত্র চাহিদা শিল্পপতিদের।
অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে দেওয়া উন্নয়নের সম্ভাবনা এর মধ্যেই কমিয়ে দেখাতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ‘আইএমএফ’, এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক ‘এডিবি’ অবিলম্বে এমন আর্থিক নীতি নেওয়ার তাগাদা দিয়েছে সরকারকে, যাতে উৎপাদনমুখী শিল্প এবং ছোট ব্যবসা উৎসাহিত হয়। প্রথমে নোটবন্দী এবং তার পর জিএসটি, এই জোড়া ধাক্কায় এই দুটি ক্ষেত্রই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার জেরে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক, সবকটি আর্থিক সংস্থা ভারতের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস সংশোধন করে বৃদ্ধির হার এখন কম করে দেখাচ্ছে। যাতে স্বাভাবিকভাবেই মুখ পুড়েছে মোদী সরকারের। আর এবার দেশের শিল্পপতিদের সোজাসাপ্টা কথায় অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গেল গেরুয়া শিবির।