হার্জের সৃষ্টি টিনটিনের গল্প থেকে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা, হাজার বার ইয়েতির কথা উঠে এলেও কেউ আজ অবধি ইয়েতির দেখা পেয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ এখনো অবধি নেই। বস্তুত, ইয়েতি নামের একটি কাল্পনিক প্রাণীকে নিয়ে জল্পনার শেষ নেই বহু বছর ধরেই। গল্প, উপন্যাসে এই নাম শোনা গেলেও বাস্তবে তার উপস্থিতি কতটা তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। শোনা যায়, হিমালয়ের গহীন তুষাররাজ্যে একা ঘুরে বেড়ায় বিশাল এক দৈত্যাকৃতি প্রাণী। এই তুষার-মানবের কবলে যারা পড়েন তাঁরা নাকি আর কখনো ফিরে আসে না। বরফাবৃত পাহাড়ের নানা রহস্যের মধ্যে ইয়েতি একটি অন্যতম রহস্য৷ অনেক ছবি, তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে ইয়েতি নামক রহস্যময় প্রাণীটিকে নিয়ে৷ এবার তার পায়ের ছাপ টুইট করে প্রকাশ্যে নিয়ে এলো ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই টুইট করা ছবি প্রকাশ্যে আসতেই উত্তাল নেট দুনিয়া। কারণ এই প্রথম ভারতীয় সেনা দাবি করেছে যে, তাঁরা বরফাবৃত হিমালয়ে ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছেন৷
ভারতীয় সেনার এই দাবি ইয়েতির অস্তিত্বের প্রসঙ্গকে ফের উস্কে দিল। যদিও বিজ্ঞানীরা এটাকে ইয়েতির পায়ের ছাপ বলতে নারাজ। গত ৯ এপ্রিল ভারতীয় সেনার মাউন্টেনিয়ারিং এক্সপিডিশন দল নেপালের মাকালু বেস ক্যাম্পে গিয়েছিল। তাঁদের দাবি, মাকালু-বরুণ ন্যাশনাল পার্কের কাছে বিশাল আকারের একটি পায়ের ছাপ দেখতে পান। সেই পায়ের আকৃতি মেপে দেখেন তাঁরা। পায়ের আকৃতি ছিল ৩২x১৫ ইঞ্চি। যদিও একটি পায়েরই চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা। জানা গিয়েছে, ইয়েতি নামক রহস্যময় প্রাণীটি বরফে ঢাকা মাকালু–বারুন জাতীয় পার্কের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে৷ ভারতীয় সেনাবাহিনী টুইটারে লিখেছে, ‘এই প্রথম, #ভারতীয় সেনার একটি পর্বতারোহী অভিযাত্রী দল ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখল৷ গত ৯ এপ্রিল ওই বিশাল পায়ের ছাপ আমরা দেখেছি৷ এই ন্যাশনাল পার্কে আগেও ইয়েতির অস্তিত্বের কথা শোনা গিয়েছে’।
ভারতীয় সেনা যে পায়ের ছাপকে ইয়েতির বলে দাবি করছে, সেটাও কি তবে ভালুকের, না কি সত্যি, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, এর আগে ২০১৭-য় ইয়েতি নিয়ে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দাবি করা হয়, ইয়েতি বলে সত্যি কিছু নেই। যারা বলেন ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখেছেন, তাঁরা আসলে ইয়েতির নয় ভাল্লুকের পায়ের ছাপ দেখেছেন। কারণ, হিমালয়ে তিন ধরনের ভালুক দেখা যায়— এশিয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, টিবেটান ব্রাউন বিয়ার এবং হিমালয়ান ব্রাউন বিয়ার। তারাই বরফাবৃত অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। তবে আধুনিক শেরপারা অবশ্য এমনটা আর বিশ্বাস করেন না। তাঁরা বলেন, পাহাড়ি মানুষদের কাছে পাহাড় ঈশ্বর-সম। তাঁরা পাহাড়কে শ্রদ্ধা করে, ভয় পায়, পুজো করে। বিশ্বাস করে, পাহাড়ের অন্দরে এমন কিছু অতিপ্রাকৃত জীববৈচিত্র্য আছে, তাদের বিরক্ত না করাই ভাল। পাহাড়ের রহস্য সম্পূর্ণ ভাবে মানুষের কাছে আজও ধরা দেয়নি বলেই বিশ্বাস করেন তাঁরা। তাই সেই না-ধরা-দেওয়া কল্পজগতেই ইয়েতির মতো প্রাণীর স্থান, বাস্তবে নয়।