প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এক-একটি নির্বাচনী প্রচারসভায় কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু তা নিয়ে কোনও খোঁজখবর করা হচ্ছে না, হচ্ছে না কোনও তদন্ত। রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সভা থেকে ঠিক এই ভাষায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক একই সুর শোনা গেল প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের গলাতেও।
বিজেপির ‘বাড়বাড়ন্ত’, বিশাল পরিমাণে অর্থ ব্যয় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘হুঙ্কার’ নিয়ে ‘নীরব দর্শকে’র ভূমিকা পালন করে চলেছে নির্বাচন কমিশন। ভারতের মানুষকে ‘সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ’ করে দিয়েছে কমিশন। রবিবার এমনটাই অভিযোগ করলেন তিনি। চিদম্বরমের বক্তব্য, এনডিএ সরকারের ব্যর্থতাগুলি গোপন করার কৌশল হিসেবে জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলেছে বিজেপি। সম্প্রতি বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে বলেছে, ভোটের প্রচারে নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর কথা উল্লেখ করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যা ‘নির্লজ্জভাবে’ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার শামিল। প্রধানমন্ত্রীর প্রচারে যাতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, সেই দাবিও তোলে বিরোধীরা।
প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতার অভিযোগ, ভারতের ইতিহাসে এর আগে কোনওদিন ভোটের সময় এতটা ‘নির্লজ্জভাবে’ আয়কর দফতর, সিবিআই ও ইডি-র ‘অপব্যবহার’ করা হয়নি। ভারতে ৫৪৫টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। বেহিসেবি টাকা কি শুরু বেছে বেছে বিরোধী প্রার্থীদের কাছে মিলছে? কোনও বিজেপি প্রার্থীর কাছে বেহিসেবি টাকা নেই? প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি সভায় যে বিশাল টাকা খরচ হচ্ছে, তার কি হবে? প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি সভার জন্য কম করে ১০ কোটি টাকা করে খরচ হচ্ছে। এই টাকা কোথা থেকে আসছে? সেই টাকা কে জোগাচ্ছে? তার হিসেব কোথায়?
কংগ্রেসের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে ৩৭টি অভিযোগ জানানো হয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ১০টি ক্ষেত্রে বিদ্বেষমূলক ভাষণের মাধ্যমে বিভাজন ও মেরুকরণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। তারই মধ্যে এদিন চিদম্বরমের দাবি, এনডিএ সরকারের ব্যর্থতাগুলি গোপন করার জন্য জাতীয়তাবাদের স্লোগান তুলছে বিজেপি। প্রতিটি ভারতবাসীই দেশপ্রেমী। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে কি ভারতবাসী দেশ-বিরোধী ছিল? প্রশ্ন হল, পাঁচ বছর আগের থেকে দেশের মানুষ কি এখন বেশি সুখে রয়েছেন। আমার মতে, না। দেশের প্রতিটি মানুষ এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
তাহলে কি লোকসভা ভোটের পর তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে? প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, বিজেপি যে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। চিদম্বরমের কথায়, অ-বিজেপি সরকার তৈরি হবে। নিশ্চিতভাবেই কংগ্রেস ও তার ভোট-পূর্ব শরিকরা বড় ভূমিকা পালন করবে। ভোট-পরবর্তী সময়ে আরও দল কাছাকাছি আসলে তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের ভালো সুযোগ রয়েছে বলেই আমার মত। এসপি, বিএসপি ও তৃণমূল সহ সব অ-বিজেপি দল কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাবে স্থায়ী সরকার গড়ার লক্ষ্যে।