যোগী রাজ্যের বাহরাইচ রাজা সুহেলদেবের জায়গা। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, মহম্মদ গজনির আক্রমণের সময়ে সুহেলদেব তাঁকে রুখে দিয়েছিলেন। কাঁসিরাম এখানে উৎসাহ দিয়েছিলেন ছোট ছোট জনজাতির কীর্তিমানদের তুলে ধরতে। তখনই সুহেলদেবের কীর্তি সামনে আসে। অন্যদিকে, মায়াবতীর উত্থানের পর অনেক দলিত-অনগ্রসর নেতাই আলাদা দল তৈরি করেছেন। ওমপ্রকাশ রাজভর তাঁদের একজন। ২০০২ সালে রাজা সুহেলদেবের নামে তিনি তৈরি করেন সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি।
যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার পিছড়ে বর্গ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী ওমপ্রকাশ। গাজিপুর লোকসভার জরুরাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তিনি। যে পাসিদের অনেকেই এখনও শূকর লালন করেন, তাঁদের নেতা ওমপ্রকাশ। তবে বিধানসভায় জোট করলেও এবারের লোকসভা ভোটে রাজভরের দল সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি বিজেপির বিরুদ্ধে ৩৯ কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে। অন্য কেন্দ্রেও তারা বিজেপির বিরোধীতা করছে। রাজভরের দলের অভিযোগ, বিজেপি তাদের প্রচারে ওমপ্রকাশ রাজভরের ছবি ব্যবহার করছে। এটাই এবারের উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে অন্যতম আকর্ষণীয়, আলোচ্য বিষয়।
তবে যোগী আদিত্যনাথ ওমপ্রকাশকে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দেননি, পাছে পিছড়ে বর্গের ভোটে ওমপ্রকাশের বিজেপি-বিরোধের প্রভাব আরও বেশি করে পড়ে। কারণ বাহরাইচ থেকে শুরু করে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সব কেন্দ্রেই রাজভর ভোট আছে ভালই। উল্লেখ্য, এক সময়ে প্যাটেলদের আপনা দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোটে লড়েছিলেন ওমপ্রকাশ। ২০১৪ সালে লোকসভায় একা লড়ে ১৩ আসনে এক লক্ষের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিল দল। তারপর বিধানসভা ভোটের সময় আসে বিজেপির সঙ্গে। এবার লোকসভায় তারা আলাদা চিহ্ন নিয়ে চার আসনে লড়তে চেয়েছিল। বিজেপি জানিয়ে দেয়, লড়তে হলে ‘কমল’ চিহ্নেই লড়তে হবে। বিরোধ বাধে সেখানেই।
এবার নির্বাচনে রাম ভজনার পাশে আদিবাসী, দলিত ভজনাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। বাহরাইচে সুহেলদেবের বিরাট মূর্তি বানিয়েছে। কারণ তিনি মুসলিম আক্রমণের বিরুদ্ধে হিন্দুদের বড় শক্তি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলে বেড়াচ্ছেন, দলিত, আদিবাসীরাই প্রকৃত হিন্দু। কিন্তু জোট না করেও যেভাবে রাজভর ভোট টানতে বিজেপি ওমপ্রকাশকে ব্যবহার করছে, তাতেই স্পষ্ট এবার উত্তরপ্রদেশে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদীর দল। অন্যদিকে, বল্লভভাই প্যাটেলকে নিয়েও বিজেপি অনেকদিন ধরেই মাতামাতি করছে। ছোট সম্প্রদায় কুর্মি। পদবি প্যাটেল। তাদেরই সোনেলাল প্যাটেল উত্তরপ্রদেশে কুর্মি-প্যাটেলদের দল তৈরি করেন ১৯৯৫ সালে। নাম দেন অপনা দল।
তাঁর মৃত্যুর পর অবশ্য দল দু’টুকরো। তাঁর কন্যা অনুপ্রিয়া প্যাটেলের অপনা দল (এস)। ২০১৪ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে প্রতাপগড় ও মির্জাপুরে জেতেন। অনুপ্রিয়া এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এবার তিন আসনে লড়ছেন। মির্জাপুরে অনুপ্রিয়া নিজে। রবার্টসগঞ্জে পকোড়িলাল কোল। প্রতাপগড়েও প্রার্থী দিয়েছেন, তবে পদ্ম চিহ্নে। তবে দলের অন্য গোষ্ঠী অপনা দল (কৃষ্ণা)–এর নেতৃত্বে কৃষ্ণা প্যাটেল, প্রয়াত সোনেলালের স্ত্রী। তারা আছে কংগ্রেস জোটে। আবার রাজভর-কুর্মিদের মতোই অনগ্রসর নিষাদরা। নৌকায় নদী পারাপার করানো কাজ। গোমতিনগরে প্রাথমিক শিক্ষক রামশরণ নিষাদ বলেন, ‘দ্রোণাচার্য একলব্যকে ভালবেসে তার বুড়ো আঙুল কেটে নিয়েছিলেন। চার আঙুলেই একলব্য তির ছুঁড়তেন। নিষাদদের টুকরো করার পরও তারা নিজেদের মতো শক্তিশালী থাকবে। ভোটে দিশা দেখাবে।’