বৃহস্পতিবার দুপুরে বীরভূমের সিউড়ির সভা থেকেই ভাটপাড়া বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সে’দিন বিকেল থেকেই প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন মদন মিত্র। শুধু তাই নয়, কামব্যাকের দিন প্রচারে টি-টুয়েন্টি খেললেও শুক্রবার থেকেই ভাটপাড়ায় ঘাঁটি গেড়ে নির্বাচনী প্রচারের লম্বা ইনিংস শুরু করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন ক্রীড়া ও পরিবহণ মন্ত্রী মদন। গতকাল সারাদিনই পদযাত্রা, পথসভা, দেওয়াল লিখন বা দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে বৈঠক সারতে ব্যস্ত ছিলেন এই পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ।
এদিকে, যে ভাটপাড়া এতদিন ছিল ‘অর্জুন’ময় সেখানেই এখন মদনকে নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চর্চা। রাস্তাঘাটে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে ইটের বদলা পাটকেল দিয়েছেন মমতা। অনেকেই আশাবাদী এবার হয়তো ভাটপাড়ায় অর্জুন জমানার অবসান ঘটবে। আম জনতার এমন মন্তব্য করাটাও স্বাভাবিক। মদনকে নিয়ে পদযাত্রায় বেরিয়ে তৃণমূলকর্মীরা স্লোগান তুলেছেন, ‘দেখো দেখো কওন আয়া, শের আয়া শের আয়া।’ অর্জুনের খাস তালুকে মদনের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে পাঠিয়ে লড়াই জমিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। মদনের হাত ধরেই তাঁরা যে ভাটপাড়ায় মুক্তির স্বাদ পেতে চাইছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন দলীয় কর্মীরা।
কর্মীদের নিরাশ করতে নারাজ মদন শুক্রবার সকালেই ভাটপাড়ায় পৌঁছেই হাজির হন গোলঘর এলাকায়। ভাটপাড়া রসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোলঘর থেকে সুন্ধিয়া পর্যন্ত বিশাল পদযাত্রা করেন মদন। পদযাত্রা হয় ১০ নম্বর ওয়ার্ডেও। দুপুরে বেশ কয়েকটি জায়গায় নিজের সমর্থনে দেওয়ালও লেখেন প্রাক্তন মন্ত্রী। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক সেরে বিকেলে আলোকুঠি থেকে কাছারি রোড ধরে ১২ নম্বর মূলাজোড় রোড পর্যন্ত একটি পদযাত্রা করেন। এর পর ভাটপাড়া বিধানসভার কয়েকটি প্রান্তে পথসভাও করেন মদন মিত্র। সব মিলিয়ে গতকাল ভাটপাড়া ছিল কার্যত মদনময়।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘আগে ভাটপাড়ায় ছিল মস্তান শের। আর এখন মদন মিত্র হচ্ছেন গণতান্ত্রিক শের। ভাটপাড়ায় যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা কাটানোর জন্য সাহসী পুরুষের নামই হচ্ছে মদন মিত্র। তাঁর হাত ধরেই ব্যালটের মাধ্যমে ভাটপাড়ার মানুষের ভয় কাটবে।’ তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ভাটপাড়ায় মদনের টিকিট পাওয়া নিয়ে খুশি এলাকার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও। এক নেতার কথায়, ‘দিদি ঠিকঠাক লোককেই প্রার্থী করেছেন। অর্জুনের সঙ্গে মদনদাই টক্কর দিতে পারবেন। লোহা কাটতে তো লোহারই দরকার হয়।’
আর মদন কী বলছেন? উল্লেখ্য, তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর প্রথমদিন জামানত বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারি দিলেও পরে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেন সদ্য দলত্যাগী অর্জুন। তিনি বলেছিলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার পর মদন মিত্রকে খুঁজে পাওয়া যায় না।’ তার পাল্টা দিতেই অর্জুনের দিকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ‘শের’ মদনের হুঙ্কার, ‘মাতাল নয়, দাঁতাল হাতি দেখেছেন তো! ভাটপাড়ায় একজন তৃণমূল কর্মীর গায়ে হাত পড়লে আগুন জ্বলবে।’