২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ অবতারে দেখা গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীকে। সেবার দেশে আচ্ছে দিন আনার স্বপ্ন, ‘বিকাশ’-এর স্বপ্ন ফেরি করেই দিল্লীর কুর্সিতে বসেছিলেন তিনি। দেশবাসীর কাছে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরীর। কিন্তু আদতে হয়েছে ক্যাঁচকলা। দেখা গেছে ৫ বছরে নতুন চাকরি তো হয়ইনি, উল্টে চাকরি গেছে বহু মানুষের। ফলে ভোটের মধ্যেও এখন বেকারত্ব নিয়ে বিড়ম্বনা পিছু ছাড়ছে না মোদী সরকারের। সম্প্রতি সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই)-র রিপোর্ট জানিয়েছে, এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭.৯ শতাংশ, ৮.১ শতাংশ এবং ৮.৪ শতাংশ। এর আগে তাদেরই রিপোর্ট বলেছিল, ফেব্রুয়ারিতে ওই হার ছুঁয়েছে ৭.২ শতাংশ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পরে সব থেকে বেশি। আর মার্চে ৬.৭ শতাংশ।
বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসনদে এসেছিলেন মোদী। কিন্তু তাঁর পাঁচ বছরে দেশে কাজের ছবিটা যে মোটেই উজ্জ্বল নয়, তা বারবার উঠে এসেছে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে। কর্মসংস্থান নিয়েই ২০১৭-১৮ সালের জন্য এনএসএসও-র সমীক্ষা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। যেখানে বলা হয়, ২০১৭-’১৮ সালে বেকারত্ব ছিল ৬.১ শতাংশ। ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। যা নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। আর সেই কারণেই তাই চলতি লোকসভা ভোটে নিজেদের নির্বাচনী ইস্তেহারে কর্মসংস্থান নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেনি বিজেপি। দেয়নি নতুন কোনও প্রতিশ্রুতিও। এবার মলাট বাদ দিয়ে ৪২ পৃষ্ঠার ইস্তাহারে ‘কর্মসংস্থান’ শব্দটি এসেছে ১২ বার। আর ‘চাকরি’ শব্দটি ৩ বার। কিন্তু কর্মসংস্থান বা চাকরির সংখ্যা নিয়ে বিজেপির ইস্তাহারে একটি শব্দও খরচ করা হয়নি।
বেকারত্ব আর রোজগার যে মোদীর ‘দুর্বল’ জায়গা, তা জানতে আর বাকি নেই কারও। গত বছরেও সংসদে বেরোজগার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে। সেই সময় ইপিএফও-তে নথিভুক্তকরণ, সংগঠিত-অসংগঠিত ক্ষেত্র, চিকিৎসক-ইঞ্জিনিয়ার-আইনজীবীদের মতো পেশাদার, নতুন গাড়ি কেনা, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিস্তার, মুদ্রা প্রকল্পে জুড়ে এক কোটি নতুন রোজগারের একটি অঙ্ক মিলিয়েছিলেন তিনি। যেটি তাঁর নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতির চেয়ে অনেক কম। কিন্তু এরপরেও তাল ঠুকে তিনি কখনই বলতে পারেননি কত রোজগার হয়েছে। যে কারণে বারবারই বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। এবং এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে চলা ভোট মরশুমেও সেই ধারা অব্যাহত।