সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে বাংলাকে। তিনি কেন্দ্রের বিরোধীতা করেন বলেই এভাবে তার বদলা নিচ্ছে মোদী সরকার, বারবারই এমন অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবুও দিন দিন সেই বঞ্চনার পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এবং তা সমস্ত ক্ষেত্রেই। যেমন রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তৃণমূল নেত্রীর নেওয়া বৃহৎ রেলপ্রকল্পে মোদী জমানায় কোনও বরাদ্দই নেই। যার ফলে গলসি-বোঁয়াইচণ্ডী রেলপথের কাজ মাঝপথেই থমকে থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।
প্রসঙ্গত কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে বর্ধমান-দুর্গাপুর ও রামপুরহাট রেলপথের সংযোগকারী গলসির থানা জংশনের সঙ্গে বাঁকুড়া-রায়নগর রেলপথে খণ্ডঘোষের বোঁয়াইচণ্ডী স্টেশনকে যুক্ত করার জন্য এই লিঙ্ক লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন মমতা। এই রেলপথের জন্য কোনও আপত্তি না করেই হাজার হাজার কৃষক ও সাধারণ মানুষ সরকারি মূল্যে তাদের তিন ফসলি জমি এবং বাস্তুভিটে তৃণমূল নেত্রীর নেওয়া প্রকল্পে উন্নয়নের স্বার্থে দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার এই রেলপথে খানা, শ্যামসুন্দরপুর, মাসিলা, খোরকোল, চাগ্রাম ও বোঁয়াইচণ্ডী পর্যন্ত ৬টি স্টেশন রয়েছে। ২০১৫ সালের আগে পর্যন্ত একটু একটু করে জমি অধিগ্রহণ করা থেকে শুরু করে জিটি রোডের ওপর ফ্লাইওভার এবং দামোদর নদের ওপর রেলসেতু নির্মাণের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে পিলার বসানো হয়েছে। এর কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল রেলমন্ত্রক। তখন পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যেই এই কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় থমকে যায় এই লিঙ্ক রেলপথের কাজ।
বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরই পরিকল্পিতভাবে এই প্রকল্পটি বন্ধ করে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তাদের দাবি, নরেন্দ্র মোদীর সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই এই ক’বছর এই বৃহৎ রেল প্রকল্পের বরাদ্দ আটকে যায়। এই বৃহৎ প্রকল্পটি থমকে যাওয়ায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গলসি ও খণ্ডঘোষের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষও। এই রেলপথের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গলসির বিধায়ক অলোক মাঝি ও খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগও।
তাঁদের কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পিত প্রকল্পের সার্থক রূপ দিতে চায় না কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তাই তৎকালীন রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর নেওয়া খানা-বোঁয়াইচণ্ডী রেল প্রকল্পের কাজ মোদি সরকার থমকে দিয়েছে। তারা বাংলার উন্নয়ন চায় না। তাই কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরই পরপর বাজেটে তারা কোনও বরাদ্দ এই রেলপথের জন্য দেয়নি।’ নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এই রেলপথের কাজ আটকে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী বাজেটেও দেখা গেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রেলের জন্য মোট ৬৪,৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও বাংলার প্রাপ্তির ভাঁড়ার সেই শূন্যই। বাজেটে বাংলার জন্য কোনও বরাদ্দ তো করা হয়ইনি, বরং কয়েকটি নির্মীয়মাণ মেট্রো রেল প্রকল্পেও অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাংলার বেশ কয়েকটি প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।