চলতি মাসেই উড়িষ্যার সম্বলপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানোয় নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়েছিলেন তিনি। তাঁকে বরখাস্ত করেছিল কমিশন। বৃহস্পতিবার তাঁর ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনেছে কমিশন। আর এই নির্দেশই মেনে নিতে পারছেন না উড়িষ্যার বিশেষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা আইএএস অফিসার মহম্মদ মহসিন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি শুধুমাত্র নিজের কাজ করছিলাম।’ ঘটনার পর এক সাক্ষাৎকারে মহসিন জানিয়েছেন, ‘আমি আমার কাজ করছিলাম। কিন্তু সেই মুহূর্তে হওয়া বাক-বিতণ্ডার পরেই আমাকে বরখাস্ত করা হয়। আমাকে একটা রিপোর্ট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আমি অন্ধকারেই লড়াই করে যাচ্ছি।’ জানা গেছে, শীঘ্রই আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন এই আইএএস অফিসার।
প্রসঙ্গত, উড়িষ্যার সম্বলপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী সভার পরে বিশেষ পর্যবেক্ষক মহম্মদ মহসিন তাঁর হেলিকপ্টারে তল্লাশি করেন। এই জন্য মোদীর হেলিকপ্টার ছাড়তে ১৫ মিনিট দেরি হয়। এই নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপের নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন ওই অফিসার। তাই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু মহসিন প্রতিবাদ করে বলেন, তিনি যে পদে ছিলেন, তাতে নির্বাচনের সময় এই ধরণের তল্লাশির অধিকার রয়েছে। তাঁকে কোনও মতেই বরখাস্ত করা যায় না। একই অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস-সহ দেশের অন্যান্য বিরোধীরাও। টুইটারে কংগ্রেস বলে, ‘মোদী হেলিকপ্টারে কী নিয়ে যান, যা তিনি সারা দেশকে দেখাতে চান না।’ একই সঙ্গে তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর কপ্টারে তল্লাশি চালানো যাবে না, এমন কোনও নিয়ম কোথাও নেই। আম আদমি পার্টির খোঁচা, ‘চৌকিদার কী লুকাতে চাইছেন?’
১৯৯৬ সালের কর্ণাটক ব্যাচের এই আইএএস অফিসারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল ( ক্যাট )-এর তরফে জানানো হয়েছে, ‘এটা বলা যায় না যে স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপের আধিকারিকরা সবকিছু করতে পারেন। কিন্তু কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের গাড়িও একাধিকবার তল্লাশি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যখন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তখন এ ক্ষেত্রেও নেওয়া যায় না।’ ক্যাটের এই বক্তব্যের পরেই নির্বাচন কমিশন মহসিনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নিজের রাজ্য কর্ণাটকে ফিরে যেতে। রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে তদন্ত করতে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করছেন মহম্মদ মহসিন।
উল্লেখ্য, যাঁরা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের নিরাপত্তা পান, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘এক মাত্র প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয় চরমপন্থী বা সন্ত্রাসবাদী হামলার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, তাঁরা এই নির্দেশের আওতার বাইরে থাকবেন।’ কিন্তু একইসঙ্গে সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তির স্বার্থে বাড়াবাড়ি রকমের কাজ করতে থাকলে কমিশন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সরকারকে জানাবেন। তার ভিত্তিতে জরুরি ব্যবস্থা নেবে সরকার।’ সেক্ষেত্রে যে নিয়মের প্রেক্ষিতে বরখাস্ত করা হয়েছে মহসিনকে, সেই নিয়মই বলছে— ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ, মোদীর কপ্টারে তল্লাশি চালিয়ে কোনও নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেননি উড়িষ্যার এই আইএএস আধিকারিক।