রাজনৈতিক নেতারা কী বলছেন বা বলছেন না, সেটা নিয়ে জনগণ বিতর্ক করুক। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এ ব্যাপারে নাক গলানো উচিত নয়। নির্বাচনের সময় রাজনীতিকেরা প্রচারে কী বলছেন, তাতে লাগাম টানার কোনও দরকারই নেই তাদের। এবার বিজেপির কু’কথা বলার সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে এমনই মন্তব্য করলেন আসামের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সেইসঙ্গে তিনি সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার নিয়েও।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের প্রচারে বিতর্কিত মন্তব্য করায় নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই শাস্তি দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ, মায়াবতী, মানেকা গান্ধী, প্রজ্ঞা সাধ্বী, আজম খানের মতো নেতাদের। কারও বিরুদ্ধে কু’কথা বলার অভিযোগ তো কারও ওপর আবার সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য বা সেনাবাহিনী রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ। এবং লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কমিশনের কোপে পড়া নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই গেরুয়া শিবিরের। রাজনৈতিক মহলের মতে, এর কারণেই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন উত্তর-পূর্বে বিজেপির সেনাপতি হিমন্ত।
হিমন্ত বলেন, আজকাল একদল ‘সুপার সিটিজেন’ তৈরি হয়েছে। তারা মনে করে, কোনও রাজনৈতিক নেতা উত্তেজক বক্তৃতা দিলে মানুষ তাঁকে শাস্তি দিতে পারবে না। তারা ভাবে, তাদেরই হাতে রয়েছে শাস্তির ভার। এ ধরনের সুপার সিটিজেনের মতো কিছু থাকা উচিত নয়। তবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল না তুলে কৌশলে তিনি বলেন, ‘আমি কারও দিকে আঙুল তুলছি না। শুধু বলছি, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যদি আমি ভুল করি, তা হলে জনগণই হবেন আমার বিচারক।’
হিমন্তের দাবি, ভারতে ‘কিছু লোক’ আছে যারা মনে করে রাজনীতিকেরা ভুল করলে মানুষ শাস্তি দিতে পারে না।’ শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা থানায় গিয়ে নেতাদের আপত্তিকর মন্তব্য সম্পর্কে যে এফআইআর দায়ের করেন, তারও বিরোধিতা করেছেন তিনি। তাঁর মতে, এতে নাকি ভারতীয় গণতন্ত্রের আকর্ষণই হারিয়ে যাবে!
হিমন্তের কথায়, ‘রাজনীতিকদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ তাঁদের বক্তব্যের বিচার করতে পারেন। কার কী বলা উচিত সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হলে, প্রতিবার ভাষণের আগে বক্তাকে আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হবে। কোনও বিষয়ে আমার কট্টর মতামত থাকতেই পারে। ভোটাররা যাতে বিচার করতে পারেন সেজন্য আমার মত বলতে দেওয়া উচিত।’
বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য একাধিক নেতার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থা নিয়েছে, সে প্রসঙ্গে হিমন্ত বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কোনও সক্রিয়তা থাকা উচিত নয়। রাজনৈতিক নেতারা কী বলছেন বা বলছেন না, সেটা নিয়ে জনগণ বিতর্ক করতে পারেন। জাতীয়তাবাদের মতো ইস্যুতে কারও দক্ষিণ বা বামপন্থী মত থাকতে পারে। বিতর্কের মধ্যে দিয়ে মানুষ ঠিক করুন কে সাচ্চা। না হলে ভারতে নির্বাচনের কোনও আকর্ষণই থাকবে না।’ অর্থাৎ বিজেপির সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য ও কু’কথার ধারাকে বজায় রাখার পক্ষেই সওয়াল করলেন হিমন্ত।