‘দিদি যে আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, এটাই সবচেয়ে বড় কথা। আমি দলের একনিষ্ট সৈনিক। মমতা বন্দোপাধ্যায় যা দায়িত্ব দেবে, মাথা পেতে নেব। পার্টি যা দায়িত্ব দিয়েছে, পালন করব।’ বৃহস্পতিবার এমন কথাই শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। তিনি যেন যুদ্ধসাজ পরে তৈরিই ছিলেন। অপেক্ষা ছিল শুধু যুদ্ধ ঘোষণার। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিউড়ির জনসভা থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাঁর নাম ঘোষণার ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই ভোটযুদ্ধে মমতার সৈনিক মদন মিত্র পৌঁছে গেলেন ভাটপাড়ায়। গতকাল রাতেই বের হল তাঁর সমর্থনে প্রথম প্রচার মিছিল। যা দেখে ইতিমধ্যেই আশঙ্কার কালো মেঘ দানা বেঁধেছে গেরুয়া শিবিরে।
উল্লেখ্য, তৃণমূলের টিকিটে জেতা অর্জুন সিং এই কেন্দ্রের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। আগামী ১৯ মে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। ফলে প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে জেলা তৃণমূলের অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছিল নানা জল্পনা। অবশেষে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ভাটপাড়ায় মদনের টিকিট পাওয়া নিয়ে খুশি এলাকার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এক নেতার কথায়, ‘দিদি ঠিকঠাক লোককেই প্রার্থী করেছেন। অর্জুনের সঙ্গে মদনদাই টক্কর দিতে পারবেন। লোহা কাটতে তো লোহারই দরকার হয়।’ মদনও দলের কর্মীদের বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমি কাউকে ছাড়া হবে না। প্রমাণ করে দিতে হবে, ভাটপাড়ার মানুষ আসলে তৃণমূলকে চান, কোনও ব্যক্তিবিশেষকে নয়।’ স্বাভাবিকভাবেই এ কথা শুনে কপালে ভাঁজ পড়েছে এলাকার অর্জুন অনুগামীদের।
প্রসঙ্গত, গতকাল ভাটপাড়ায় পৌঁছেই দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক দফা বৈঠকের পরে মদন বেরিয়ে পড়েন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে। রাত ৯টায় ভাটপাড়ায় ফিরে ফের একদফা নিজের প্রচার সারেন তিনি। প্রচার শেষে নিজের পুরনো মেজাজেই মদন জানিয়ে দেন ভাটপাড়া যতই অর্জুন সিংহের এলাকা হোক, আসলে তা তৃণমূলেরই। ভোটের ফলেই তার প্রমাণ মিলবে। উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ভাটপাড়ায় বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে নিয়ে চর্চা চলছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সব দিক বিবেচনা করেই মদনকে প্রার্থী করা হল। মদনকে যে প্রার্থী করা হচ্ছে, দলের ওপরতলার কয়েকজনের কাছে সে খবর আগেই ছিল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনদুয়েক আগে মদনের নাম চূড়ান্ত হয়। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে আগেই জানানো হয়েছিল মদনের নাম। সেই মতো বুধবার ভাটপাড়ার স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে তিনি জানিয়ে দেন, স্থানীয় নয়, বাইরের কাউকে প্রার্থী করা হচ্ছে। তবে সে’দিন প্রার্থীর নাম তিনি জানাননি। তবে কেন মদনকেই প্রার্থী করা হল, তা জেলার তৃণমূল নেতাদের কাছে ব্যখ্যা করেছেন পার্থ। তাঁর মতে, বিজেপি যাকেই প্রার্থী করুক না কেন, আসলে লড়বেন সেই অর্জুনই। ফলে, তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে মদনের মতোই ডাকাবুকো প্রার্থী দরকার ছিল। কারণ, মদন জেলার নেতাদের ভাল চেনেন। কাছেই কামারহাটি বিধানসভার প্রার্থী ছিলেন তিনি। পাঁচ বছর মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দফতরও সামলেছেন। পার্থ বলেন, ‘খোদ দলনেত্রী প্রার্থী ঠিক করেছেন। ভাটপাড়ার মানুষ শান্তি চান। দীর্ঘদিন পরে তাঁরা সেই সুযোগ পেয়েছেন।’