বিজেপি কেন্দ্রের সরকার গঠনের পরে দেশের হাল খারাপ হয়েছে উত্তরোত্তর ভাবে। মোদী যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন তার সবকটাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মানুষের ওপর। এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হল জিএসটি এবং নোটবন্দী। জিএসটি ও নোটবন্দির জেরে বিপন্ন হয়ে পড়েছে কাজুশিল্প। ভোটের প্রচারে যা হাতিয়ার হয়ে উঠেছে তৃণমূলের।
এ বার ভোট পর্বের প্রথম থেকেই রাজ্যের শাসক দলের প্রচারে গুরুত্ব পাচ্ছে কাজুশিল্পের এই দুরবস্থা। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কাঁথি ১ ও ২ ব্লক এবং রামনগর ১ ও ২ ব্লকে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজার কাজু প্রসেসিং ইউনিট রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। জিএসটি ও নোটবন্দির জেরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে কাঁচা কাজু ফল এনে এই চারটি ব্লকে কুটির শিল্পের আকারে কাজু বাদাম বের করা হয়। জিএসটি–র কাগজপত্র তৈরি ও নতুন ব্যবস্থা বুঝে ওঠার আগেই সেল ট্যাক্স দপ্তরের কড়াকড়িতে সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে। তাঁরা কী করবেন, ভেবে উঠতে পারছিলেন না। গত ডিসেম্বরে দিঘায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন বেঙ্গল কাজু অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশমতো সেল ট্যাক্স দপ্তর বকেয়া সেল ট্যাক্সের ওপর চাপানো সুদ–সহ ২০০ শতাংশ পেনাল্টি প্রত্যাহার করে নেয়। এককালীন বকেয়া ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়ার ওপর ৭৫ শতাংশ ছাড়ও দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে জিএসটি এবং নোটবন্দির কোপে পিছিয়ে পড়া কাজুশিল্প এখন অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে রাজ্য সরকারের এমন সিদ্ধান্তের জন্য।
বেঙ্গল কাজু অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মলয় সামন্ত বলেন, ‘নোট বদলের সেইদিন আজও আমরা ভুলতে পারিনি। চরম দুর্ভোগের মধ্যে সেই সময় কাটিয়েছি আমরা। এরপর আবার নতুন করে জিএসটি যুক্ত হওয়ায় সব কিছুরই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পেনাল্টি ও সুদ–সহ বকেয়া সেল ট্যাক্সের সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কথা রেখেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর কোনও ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না আমরা।’
কাজুশিল্পের এই সমস্যাকে সামনে রেখেই দলের কর্মী–সমর্থকদের নিয়ে জোরদার প্রচারও সেরে ফেলেছেন তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী। তিনি বলেন, ‘সুযোগ পেলে পার্লামেন্টে গিয়ে কাজুশিল্পের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরব। আগামিদিনে কাজুশিল্প ও কাজু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যাতে কোনও ভাবে সমস্যার সম্মুখীন না হন, সেই বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হবে।’মোদীর ব্যর্থতার রেশ ছড়িয়ে গেছে সব জায়গাতে। আর এখন ভোটবেলায় এই ইস্যুকে সামনে রেখে কাজু ব্যবসায়ী এবং শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের ভোট তৃণমূলের দিকে টানতে আগে যেভাবে প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা তাতে বিজেপি ফিনিশ কার্যত সময়ের অপেক্ষা।