বিধানসভায় জিতেছেন চারবার, সাংসদ হিসাবেও জয়ী হয়েছেন চারবার। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মানুষের পাশে সবসময় থেকেছেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজও তিনি প্রচারে বেড়োলে বিপুল ভাবে জনজোয়ার দেখা যায়।
গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকেই বেলগাছিয়া এমআইজি হাউজিং চত্বর প্রায় অবরুদ্ধ। হাউজিংয়ের গেটের বাইরে এসে জমছে একের পর এক মিছিল। সামনে থাকা কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা ও যুব কর্মীরা মিছিলের ভিড় ম্যানেজ করতে ব্যস্ত। ঠিক ৬টা নাগাদ এসে নামলেন উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি, পায়ে স্নিকার, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। হুডখোলা সাদা জিপসিতে উঠে পড়লেন লোকসভায় তৃণমূলের নেতা। সঙ্গী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন মাইক হাতে বলতে শুরু করলেন, ‘যখন ডাকি তখন পাই, সুদীপদাকে আবার চাই।’
রোজ ভ্যালি তদন্তে সিবিআই হেফাজতে থেকেছেন প্রায় সাড়ে চার মাস। কিন্তু তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবছেন না তিনি। কারণ সেই ঘটনার পরে তিন বছর কেটে গেলেও সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে একটা অপরাধও প্রমাণ করতে পারেনি। রুমালে ঘাম মোছার ফাঁকে তিনি জানালেন, “ওটা আমার প্লাস পয়েন্ট। ধরে নিয়ে চলে গেল, তার পর তিন বছর তো কিছুই হল না! মানুষ বুঝতে পেরেছে সবই প্রতিহিংসা”।সামনে থাকা জনতার দিকে আঙুল দেখিয়ে চার বারের জয়ী সাংসদ বললেন, ‘এই যে দেখছেন, আশপাশের বাড়ির জনতা দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন তা দেখেই বোঝা যায় মানুষ আমার গ্রেপ্তারি মেনে নেয়নি।’ বিধানসভায় জিতেছেন চারবার, সাংসদেও জয়ী হয়ে পা রেখেছেন চারবার। তবে দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এ বারের সাড়া দেখে তাঁর দাবি, ‘আমার বিরুদ্ধে বিজেপির আচরণে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠছে মিছিলে।’
পাতিপুকুর মাছ বাজারের কাছে মিছিল পৌঁছতেই এগিয়ে এলেন স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ দত্ত। সুদীপের কাছে প্রশ্ন, ‘নয়নাদি কোথায়?’ সুদীপ জানালেন, ‘দিদিও প্রচারেও ব্যস্ত। ওঁকে নিয়েও একদিন আসব।’ দু’পাশে অধিকাংশ ফ্ল্যাট বাড়ির জানলা-ব্যালকনিতে উৎসাহী মুখের ভিড়। প্রার্থীকে দেখিয়ে শান্তনু সেন বলে চলেছেন, ‘এই শহিদ কলোনি, বীরপাড়া, কাঠগোলায় আলোর সমস্যা মিটেছে। পানীয় জলের সমস্যাও নেই। রাস্তাঘাট থেকে পার্ক হয়েছে সবই, তার বিনিময়ে আপনারা জোড়াফুলে ভোট দিন।’
মিছিল জে কে ঘোষ লেনে পৌঁছতেই সামনের ঢাকিদের উদ্দেশে দলীয় কর্মীরা বলছেন, ‘বিজেপি বিদায়ের ঢাকটা বাজাও।’ কী বুঝছেন ভোট নিয়ে? বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতার জবাব, ‘আকাশ আর সেনাবাহিনীর নামে ভোট চাওয়া ছাড়া বিজেপির হাতে কিছু নেই। মানুষ পাঁচ বছর আগে ভেবেছিল, মোদী বড় নেতা। কিন্তু, এখন সেই মোহভঙ্গ হয়েছে।’ বাংলায় ৪২-এ ৪২টি কেন্দ্রেই ঘাসফুল ফুটবে এ ব্যাপারে তাঁর মনে কোনও দ্বিধা নেই।