প্রায় ১৭ বছর পর বিচার পেলেন গুজরাট দাঙ্গায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া বিলকিস বানো। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ এই মামলার রায় দিলেন। বিলকিস বানোকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে তাঁকে সরকারি চাকরি এবং বাসস্থানের ব্যবস্থাও করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গুজরাত সরকারকে।
দাঙ্গা বিধ্বস্ত গুজরাতে বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্ট। সেই রায় অব্যাহত রাখল সর্বোচ্চ আদালত। এই ঘটনায় মুক্তি পাওয়া ৫ পুলিশ অফিসার ও ২ চিকিৎসকেরও যাবজ্জীবনের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই পুলিশ অফিসারদের ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রমাণ চাপা দেওয়া ও লোপাটের অভিযোগ ছিল। সবমিলিয়ে মোট ১৮ জনের সাজার নির্দেশ দিল আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গুজরাতে গোধরা কাণ্ডের পর আহমেদাবাদের কাছে একটি গ্রামে বিলকিস বানোর উপরে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। গর্ভবতী বিলকিস বানোকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর তাঁর মা ও বোনকেও ধর্ষণ করা হয়। এবং তাঁর পরিবারের মোট ৭ জনকে খুন করা হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ১২ জনকে যাবজ্জীবন সাজা শোনায় বম্বে আদালত। তাঁর মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়। বাকিদের সাজা বহাল রেখে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি দীপক গুপ্ত এবং বিচার পতি সঞ্জীব খন্নার ডিভিশন বেঞ্চ।
২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সবচেয়ে নৃশংস এবং পরবর্তী কালে সবচেয়ে আলোচ্য ঘটনা ছিল বিলকিস বানোর ঘটনা। প্রসঙ্গত, গুজরাতে তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ধর্ষণ এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যার অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় থানায় গেলে সেখানে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয় নি, উল্টে থানা থেকেই হুমকি দেওয়া হল। হুমকিতে দমে না গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে ঘটনাটি জানান বিলকিস। আবেদন করেন শীর্ষ আদালতে। সিবিআইকে ঘটনার তদন্তের ভার দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তদন্ত চলাকালীন একাধিক বার হুমকি আসায় মামলা গুজরাত থেকে সরিয়ে মহারাষ্ট্রে নিয়ে যেতে বাধ্য হন বিলকিস বানো।
সেই মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি বারবার বুক কাঁপায় সাধারণ মানুষদের। সেই থেকে বিলকিস বানো ঘুরে বেরিয়েছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সুবিচারের আশায়। সুবিচার কিনা জানা নেই তবে এতদিনে বিচার পেলেন বিলকিস বানো। এখন ৪০ বয়সী বিলকিস বানো এই রায়কে স্বাগত জানায় কিনা সেটা পরেই জানা যাবে।