‘এ রাজ্যে বাম-বিজেপি-কংগ্রেস এক হয়ে লড়ছে মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রী বানাতে। কিন্তু আমরা মানুষকে নিয়ে এক হয়েছি মোদী সরকারকে হঠাতে।’ সোমবার ঠিক এই সুরেই একইসঙ্গে রাম-বাম-কংগ্রেসকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বর্ধমান পূর্বে ভোটপ্রচারে এসে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নমূলক ও সামাজিক কর্মসূচি তুলে ধরার পাশাপাশি কেন্দ্র তথা বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধীতা ও বিজেপির কাছে বাম-কংগ্রেসের বিকিয়ে যাওয়ার তীব্র নিন্দা করলেন মমতা।
গতকাল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর, দেওয়ানদিঘি এবং রায়না। পর পর তিনটি নির্বাচনী জনসভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিস্তীর্ণ এলাকা মূলত গ্রামীন এবং কৃষিপ্রধান এলাকা। তাই কৃষক স্বার্থে গত ৮ বছরে রাজ্য সরকার কী করেছে, প্রতিটি সভাতেই তার খতিয়ান দেন মমতা। মুখ খোলেন বিগত ৫ বছর ধরে মোদী সরকারের নানা জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েও। তিনি স্পষ্ট বলে দেন, ‘বিজেপির ধর্ম মানুষ খুনের ধর্ম। তা প্রচার করেই দেশব্যাপী অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছে ওরা। আমি বিজেপির এই ধর্ম মানি না।’
শুধু তাই নয়, এক সময়ের লাল দুর্গে দাঁড়িয়ে তিন তিনটি সভায় বামেদের বিরুদ্ধেও কড়া বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী। কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেও বুঝিয়ে দেন, প্রতিপক্ষ হিসেবে কাউকেই ছোট করে দেখতে রাজি নন মমতা। তিন বিরোধী দলকে এক সারিতে বসিয়ে তাঁর তোপ, এ রাজ্যে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি এক হয়ে লড়াই করছে মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রী বানাতে। আর তিনি লড়ছেন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। মোদীকে গদিচ্যুত করতে।
ফসল বিমা, কৃষক বন্ধু, ৬০ বছর বয়সের আগে কৃষকের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ-সহ রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির কথা তুলে ধরে রায়নার সভায় মমতা বলেন, ‘প্রতিবছরই ঝড়বৃষ্টিতে এই এলাকায় চাষের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যায় ফসল ডুবে যাওয়া, কিংবা খরায় পুড়ে যাওয়া, সবেতেই আমরা ক্ষতিপূরণ দিই। আগেও দিয়েছি, ভবিষ্যতেই সেই আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।’ এছাড়া দামোদর অববাহিকায় সেচের ব্যবস্থা, চাষের উন্নতি এবং ক্ষয়ক্ষতি হলে সাহায্য করতে একটি নতুন প্রকল্পের কাজ চলছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
প্রতিটি নির্বাচনী জনসভাতেই বিজেপির সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন মমতা। গতকালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, কোনও একটি সম্প্রদায়কে তোষণ এবং তা নিয়ে মাতামাতি নয়, বরং বাংলার সংস্কৃতি মেনে সব ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করাই তাঁর এবং তাঁর সরকারের নীতি। তাঁর অভিযোগ, বাংলায় দুর্গোৎসব, ইদ, বড়দিন— সব ধর্মের অনুষ্ঠান সমান ভাবে এবং সাড়ম্বড়ে পালিত হয়। কিন্তু সেই সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। বাংলার মানুষ এটা মেনে নেবেন না— দাবি মমতার।
অবিভক্ত বর্ধমান জেলার গ্রাম-শহর এবং শিল্পাঞ্চল এক সময় বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। কিন্তু সেই বামেরা এখন পিছনের সারিতে। মমতার মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি। কিন্তু তবু তাঁর নিশানা থেকে বাদ যায়নি বামেরা। বিজেপির সঙ্গে বামেদের আঁতাতের অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘এ রাজ্যে বাম-বিজেপি-কংগ্রেস এক হয়ে লড়ছে মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রী বানাতে। কিন্তু আমরা মানুষকে নিয়ে এক হয়েছি মোদী সরকারকে হঠাতে।’ একইসঙ্গে তাঁর আহ্বান, ‘যাঁরা এখনও বামপন্থী আছেন, তাঁরা বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে যাবেন না।’
২০১৪ সালে বিজেপি যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল, সেগুলির কথা গতকাল আরও এক বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘বিজেপি বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা আপনাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেবে। আপনারা পেয়েছেন সেই টাকা? সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হওয়া দূরের কথা, উল্টে নোটবন্দী, জিএসটির ফলে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন।’ এরপরই জনগণের কাছে তাঁর আর্জি, ‘ওরা করেছে নোটবন্দী, আপনারা করুন ভোটবন্দী। একটাও ভোট দেবেন না মোদীকে৷’ পূর্ব বর্ধমানবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দিল্লীর এই নির্বাচনে আমাদের রাজ্য থেকে ৪২টি আসনে জিতিয়ে দিন। তাহলে দেশের সরকার গড়তে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারব।’