লোকসভা নির্বাচনের তিন দফায় ভোট শেষ। প্রচারের পারদ তুঙ্গে। জনসভার মঞ্চ থেকে বাক-বিতন্ডার লড়াই যখন চরমে, আর গ্রীষ্মের দাপট যখন সপ্তম আকাশে তখন প্রচার সভায় তথ্যের সাথে একটু আধটু জল মেশানোটা স্বাভাবিক। কিন্তু বলিহারি যাই প্রধানমন্ত্রী বাবুর কীর্তিকলাপ দেখে। স্বাভাবিককেই অস্বাভাবিক হাস্যস্পদ করে তুলতে ওনার জুড়ি মেলা ভার। আজ যেমন আসানসোলে তিনি বলে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাংলা মডেল’ দেশে চলবে না।
এখন, মোদীবাবুকে কে বোঝায়, যে মডেলকে তিনি আধঘন্টা ধরে আসানসোলের দাবদাহের মধ্যে ঠাট্টা করলেন, সেই মডেলকেই ওনার সরকার গত পাঁচ বছরে বাহবা দিয়ে এসেছেন। এমনকি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সমাদৃত হয়েছে বাংলা। রাজনৈতিক কূটকচালি নয়, যুক্তি দিয়ে, ২৫টি সরল তথ্য তুলে মোদীবাবুকে জানিয়ে রাখছি – বাংলাই এখন দেশের মডেল।
১। রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চে সম্মানিত হয়েছে বাংলার তিনটি প্রকল্প – কন্যাশ্রী (২০১৭), উৎকর্ষ বাংলা ও সবুজ সাথী (২০১৯)।
২। নদীয়া জেলা দেশের প্রথম নির্মল জেলা ঘোষিত হয় ২০১৫ সালে। এর জন্য রাষ্ট্রসংঘের প্রশংসাও পেয়েছে এই জেলা।
৩। একশো দিনের কাজে দেশের সেরা হয়েছে বাংলা, বলছে কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট।
৪। পরপর পাঁচ বছর কৃষি কর্মণ পুরস্কার পেয়েছে বাংলা।
৫। বাংলার ন্যায্য মূল্য ওষুধের দোকান ও বিনামূল্যে চিকিৎসাকে দেশের মডেল ঘোষনা করে কেন্দ্র।
৬। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতে গ্রামীণ উন্নয়নে দেশের মডেল বাংলা।
৭। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় বেকারত্ব কমেছে ৪০%
৮। অল ইন্ডিয়া স্কিল কম্পিটিশনে বাংলা পরপর তিন বছর প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
৯। বাংলার ই-কুবের প্রজেক্টকে দেশের মডেল ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
১০। কেন্দ্রের কাছে ই-গভর্নেন্স পুরস্কার পেয়েছে বাংলা।
১১। গ্রামীণ রাস্তা ও গৃহ নির্মাণে দেশের সেরা বাংলা।
১২। বাণিজ্য করার সুবিধায় দেশের অগ্রণী রাজ্যগুলির অন্যতম বাংলা।
১৩। বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে স্বাক্ষরিত মৌয়ের ৬০% এরও বেশি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভাইব্র্যান্ট গুজরাটের ক্ষেত্রে এই হার ১০% এরও কম।
১৪। নবরূপে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনকে দেশের সেরা স্টেডিয়ামের তকমা দিয়েছে ফিফা।
১৫। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রেও দেশের সেরা বাংলা।
১৬। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে দেশে সবচেয়ে বেশি কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয় বাংলায়।
১৭। তাঁত সামগ্রী বিপণনের জাতীয় প্রতিযোগিতায় রাজ্য সেরার তকমা পেয়েছে। তন্তুজ পেয়েছে নীতি আয়োগের প্রশংসাও।
১৮। গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের জন্য আইপিপিএআই এর পুরস্কার পেয়েছে বাংলা।
১৯। দিল্লির গণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে দু’বছর বাংলার ট্যাবলো সেরা হয়েছে।
২০। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলার ৬টি পুরসভা আন্তর্জাতিক সি-৪০ পুরস্কার পেয়েছে।
২১। ইউনেস্কোর সাথে সহযোগিতায় রাজ্যজুড়ে গ্রামীণ হাট ও শিল্পগ্রাম তৈরী করা হয়েছে।
২২। বিশ্ব বাংলা ব্র্যান্ড তৈরী হয়েছে এবং রাজ্য ও দেশজুড়ে বিপণন কেন্দ্র খুলেছে।
২৩। বাংলার রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়া ও ৬টি হস্তশিল্প পেয়েছে জিআই ট্যাগ।
২৪। রাজ্য সরকার তদ্বির করার ফলে দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ সম্মান দিয়েছে ইউনেস্কো।
২৫। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন ২০১৮ সালে রেড রোডের দুর্গাপুজো বিসর্জন কার্নিভালকে বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটন গন্তব্য ঘোষণা করে।
আমি চাইলেই আরও লিখে যেতে পারি। সংখ্যালঘুদের বৃত্তি প্রদান থেকে শুরু করে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার প্রদান, নেতাজির ফাইল প্রকাশ্যে আনা হোক কি বরেণ্য মাটি তীর্থ তৈরী – বাংলা সব ক্ষেত্রেই ভারত তথা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে। তাই নির্বাচনের বৈতরণী পার করার অছিলায় বাংলাকে অপমান দয়া করে করবেন না মোদীবাবু। গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা। আর বাংলার অপমান মানুষ মেনে নেবে না। কড়ায়-গণ্ডায় মিটিয়ে দেবে। ইভিএমে টের পাবেন ফল হাতেনাতে।
আশা করব, এরপর যখন বাংলায় আসবেন, হোমওয়ার্কটা করে আসবেন।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত