মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে আমুল বদলে গেছে নন্দীগ্রাম। জলপ্রকল্প থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, আলো সব কিছু দিয়ে নতুন করে নন্দীগ্রামকে সাজিয়ে তুলেছেন মমতা। নন্দীগ্রামের প্রচারে মমতার এই উন্নয়নই হাতিয়ার হয়ে উঠছে তৃণমূলের।
৩৪ বছরের বাম শাসনকালে নন্দীগ্রামকে বারবার ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের বিষয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করা হয়নি। এ রাজ্যে মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই নোনা জলবেষ্টিত এই ভূখণ্ডে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পাম্পিং স্টেশনের জমি মেলা নিয়ে প্রথমে কিছুটা জটিলতা থাকলেও, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় স্থানীয় বাসিন্দারাই স্বেচ্ছায় জমি দান করে মিটিয়ে দিয়েছেন সেই সমস্যা। দেড় হাজার কোটি টাকার জল প্রকল্পকেই প্রচারে হাতিয়ার করছে তৃণমূল।
নন্দীগ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে আছে মমতার উন্নয়নের নিদর্শন। মানুষ আপ্লুত তাঁর যাবতীয় কাজের জন্যে। ভোটবাক্সে যে এর প্রতিদান দেবেন তা জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এখানে যে বিরোধীরা কিচ্ছু করতে পারবেন না তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছন সকলেই।
এলাকার এই উন্নয়নের ছবি তুলে ধরে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দানের যুক্তি খাড়া করেছেন নন্দীগ্রামের তরুণী সুস্মিতা পড়ুয়া। বছর কুড়ির সুস্মিতা শেষ পঞ্চায়েত ভোটে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এবার লোকসভা নির্বাচনটাও তার কাছে প্রথম। তরুণীর অকপটে জানিয়েছে, “বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে ভুল পদক্ষেপ। আমি ছাত্রী হিসেবে কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী সবই পেয়েছি৷ আমার মতো বহু পড়ুয়া রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পেয়েছে ৷ অতএব ভোট কাকে দেব, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷”
নন্দীগ্রাম কাকে লিড দেবে? সরাসরি প্রশ্নটা করতেই জমিতে কাজ করতে করতে উঠে এলেন আজি আলমগির হোসেন। অল্প জায়গায় অভিনব পদ্ধতিতে চাষ করে রাজ্য সরকার থেকে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। প্রশ্নটা শুনে বললেন, “নন্দীগ্রামের মাটি মোটেই নরম নয়। তাই যে বিজেপিকে নন্দীগ্রামে জমিরক্ষার আন্দোলনে দেখা যায়নি, তাদের পাশে আন্দোলনের ভূমি নন্দীগ্রাম থাকবে কী করে? নিহত তো দূরের কথা, আহতদের পাশেও দেখা যায়নি।”
স্থানীয় কান্ডপসরা গ্রামের বছর তিরিশের যুবক, পেশায় ব্যবসায়ী রঘুনাথ মাইতি উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যে শাসক দলের পক্ষে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত৷ তিনি বলেন, “স্বাধীনতার কয়েক দশক কেটে যাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে নন্দীগ্রাম নগরায়নের ছোঁয়া পেয়েছে৷ উন্নয়ন নিয়ে কোনও কথা হবে না ৷ যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁরা নন্দীগ্রামের সারাটা এলাকা ঘুরে দেখুন উন্নয়ন কাকে বলে ৷ অতএব নন্দীগ্রামে বিজেপি, কংগ্রেস কেউই মাটি পাবে না৷”
নন্দীগ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী, বছর চল্লিশের যুবক শেক আজানূর হোসেন চায়ে চুমুক দিতে দিতে নিজের মতো করে পরিস্থিতির কথা বলছিলেন। ‘‘সারা দেশ জুড়ে বেকারত্ব বেড়েছে ৷ নতুন শিল্প স্থাপনের কোনও উদ্যোগ নেই৷ নেই কর্মসংস্থানের বিকল্প রাস্তা তৈরির উদ্যোগ ৷ অথচ মোদি সরকার আচ্ছে দিনের গল্প দিয়ে আম জনতাকে ভোলাবার চেষ্টা করেছে৷ আমরা এমন ভুলভুলাইয়া দেখে ছুটতে নারাজ৷ মোদির শেখা উচিত আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে। সার্বিক উন্নয়ন কাকে বলে নন্দীগ্রাম দেখেছে। ফলে ভোটের বাক্সে তার প্রভাব তো পড়বেই।”