একেই নোটবন্দী, জিএসটির মতো একাধিক ইস্যুতে ব্যাকফুটে মোদী সরকার। তার ওপর গোটা দেশ জুড়েই বইছে প্রবল বিজেপি বিরোধী হাওয়া। লোকসভা ভোট চলাকালীন এমনই টালমাটাল পরিস্থিতিতে এবার মার্কিন মুলুক থেকে উদ্বেগজনক খবরটি পেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওয়াশিটংন জানিয়ে দিল, ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল কিনলে আর রেহাই মিলবে না। তবে ইরানি তেল আমদানির পরিমাণ শুধু কমালেই হবে না, তেহরানকে সরাসরি জানিয়ে দিতে হবে, তোমার তেল আর চাই না। না হলে পয়লা মে থেকেই ইরানি তেলের ক্রেতা দেশগুলির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে শুরু করবে আমেরিকা। তা সে ভারতই হোক বা অন্য কোনও দেশ, ৩০ এপ্রিলের পর ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল কিনলে আর কাউকেই ছেড়ে কথা বলবে না ওয়াশিংটন।
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা স্পষ্টই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ইরানি তেল কেনা দেশগুলিকে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিতে ট্রাম্প প্রশাসন ৬ মাসের জন্য যে ‘সিগনিফিক্যান্ট রিডাকশান এক্সেপশন্স (এসআরই)’ চালু করেছিল, তার মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ভারত-সহ যে সব দেশ ইরান থেকে নিয়মিত অপরিশোধিত তেল কেনে, গত নভেম্বরে তাদের ৬ মাসের জন্য কিছুটা রেহাই দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। বলা হয়েছিল, এই ৬ মাসের মধ্যে খুব দ্রুত ইরান থেকে তেল আমদানি কমিয়ে ফেলতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে। যাতে সেই তেল বেচা অর্থে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বাড়বাড়ন্ত ও নাশকতামূলক কাজকর্মকে সাহায্য না করতে পারে তেহরান। গোপনে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে না যেতে পারে।
এসআরই-র মেয়াদ যে ওয়াশিংটন আর বাড়াচ্ছে না, এই খবরটা ভারতের পক্ষে যথেষ্টই উদ্বেগের, কারণ, যে ৮টি দেশ ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল কেনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে, তাদের মধ্যে ভারত রয়েছে দু’নম্বরে। প্রথমে রয়েছে চিন। আর এই দু’টি দেশের পরেই রয়েছে যথাক্রমে ইতালি, গ্রিস, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও তুরস্ক। গত বছরের মার্চের তুলনায় ইরানি তেল আমদানির পরিমাণ কমলেও, গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় তা বেড়ে মার্চে হয়েছে দিন-পিছু ৪ লক্ষ ৫ হাজার ব্যারেল। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে এই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুধু ইরান থেকেই মোট ১ হাজার ১৪২ কোটিডলার মূল্যের অরিশোধিত তেল কিনেছে ভারত। যা তার আগের অর্থবর্ষের (২০১৭-‘১৮) তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে ভারতকে এখন ভাবতে হচ্ছে, এই বিপুল পরিমাণ তেল কোন কোন দেশ থেকে আমদানি করে ঘরোয়া চাহিদা মেটানো যেতে পারে, কেন্দ্রীয় তেল মন্ত্রক সে ব্যাপারে এখনও সুনিশ্চিত হতে পারেনি। তেল মন্ত্রকের একটি সূত্র বলছে, এই সব ক্ষেত্রে কোনও একটি দেশের নয়, ভারত সরকার একমাত্র রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞাই মেনে চলতে বাধ্য থাকতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জ এখনও তেমন কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তবে তার ‘খেসারতে’র বহরটা কেমন হবে, তা নিয়েই এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মোদীর। কারণ সংশ্লিষ্ট দেশগুলি ইরানি তেল আমদানি চালিয়ে যেতে থাকলে আগামী পয়লা মে থেকেই তাদের মার্কিন প্রশাসনের কোপের মুখে পড়তে হবে। যার প্রভাব পড়তে পারে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য-সহ প্রায় সবক’টি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। ভোটের মরশুমে ট্রাম্পের এই নির্দেশ যে আবারও নতুন করে চাপ বাড়াল মোদীর, তা বলাই বাহুল্য।