শুধু জাতীয়তাবাদের জিগিড় তুলে বা সাম্প্রদায়িক তাস খেলে যে এবার আর ভোটে জেতা যাবে না, তা ভাল মতোই টের পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই দেশের সন্ত্রাস মোকাবিলার বড় বড় বুলি আউড়ানো বাদ দিয়ে এবার কৃষকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে মায়াকান্না কাঁদলেন তিনি। যদিও তাতে চিঁড়ে ভেজেনি।
প্রসঙ্গত, সোমবার মহারাষ্ট্রের ভোটপ্রচারে মোদীর ভাষণে ছিল মূলত পেঁয়াজ আর আখ চাষিদের দুর্দশার কথা। এমনকী গতকাল তিমি টেনে আনেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালের প্রসঙ্গও। তবে এই সব ব্যাপারেই সঙ্কটের দায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেস ও এনসিপির ওপরেই চাপিয়ে দিয়েছেন তিনি। মহারাষ্ট্রের নাশিক, ডিন্ডোরী, ধুলে কেন্দ্রগুলির বিজেপি-শিবসেনা প্রার্থীদের জন্য গতকাল ভোটপ্রচারে গিয়েছিলেন মোদী। নাশিকে রয়েছে হ্যালের একটি কারখানা। রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, রাফালের বরাত হ্যালকে দেননি মোদী, দিয়েছেন অনিল আম্বানীকে। জবাবে মোদীর সাফাই, হ্যালকে ধ্বংস করেছে বিরোধীরাই। বরং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উৎপাদন বাড়িয়েছে তাঁর সরকার।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ছিল পিম্পলগাঁও ও নন্দুরবার এলাকায়। বহুদিন ধরেই চোখের জল ফেলছেন এখানকার পেঁয়াজ চাষিরা। চাষের যা খরচ, তাতে লাভের আশা তো দূর, ফসল বিক্রি করতে বাজারে আনার টাকাই উঠছে না। অতীতে এর প্রতিবাদে পেঁয়াজ চাষিরা তাঁদের স্বল্প লাভের অঙ্কও প্রধানমন্ত্রীকে মানি অর্ডার করে পাঠিয়ে দিয়ে বিষয়টিকে গোটা দেশের সামনে এনেছেন। ভোট মরশুমে এই চাপ কাটাতে মোদী দাবি করেন, পেঁয়াজ মজুত করার ব্যবস্থা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে তাঁর সরকার। ফসল পরিবহণের খরচ যাতে কমে, সেই চেষ্টাও হচ্ছে। ৫ বছর সরকার চালানোর পরে তাঁর দাবি, কংগ্রেসই নাকি ফসলের দাম পেতে দেয়নি চাষিদের! দালালদের জন্য কাজ করে গিয়েছে তারা!
সেইসঙ্গে নিজেকে নিজে শাবাসি দিয়ে মোদীর মন্তব্য, ‘দালালদের বিরুদ্ধে আমিই লড়ছি। আমাদের সরকার দালালরাজ শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ আর আখ চাষিদের উদ্দেশ্যে এবার তাঁর ‘প্রতিশ্রুতি’, তাঁদের সমস্যা মেটাতে ইথানল উৎপাদনের কথা ভাবা হবে। যদিও এই প্রতিশ্রুতিকে জুমলা বলেই মনে করছেন আখচাষীরা। অন্যদিকে, অরণ্যবাসীদের উদ্দেশ্যে মোদীর আশ্বাস, যে জমিতে তাঁরা চাষ করছেন, তাতে কেউ হাত দিতে পারবে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্রের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রেও যেহেতু বিজেপি সরকারে রয়েছে। ফলে এই সঙ্কটের দায় তাদের ওপরই আসছে। সেই কারণেই এবার এই সমস্যা নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন মোদী।