রানাঘাট লোকসভার অন্তর্গত পশ্চিম রানাঘাটের নাসরার বাণী সংঘ মাঠে জনসভা করলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় যে বিপুল জনসমাবেশ হয়েছিল তা আবারও প্রমাণ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থা। আজকের এই সভা ছিল রানাঘাটের তৃণমূল প্রার্থী রূপালি বিশ্বাসের সমর্থনে।
বক্তব্যের প্রথমেই সভায় উপস্থিত সকলকে তিনি অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানান এই তীব্র রোদ উপেক্ষা করে সভায় আসার জন্যে। তারপরে তিনি জানান, নদিয়া জেলাতে মমতার সভায় যে বিপুল উচ্ছ্বাস দেখা গেছিল তার কথা। মানুষ যেভাবে ভরসা দিচ্ছেন তাতে তিনি আপ্লুত। তিনি বলেন, ‘এই সমর্থন থাকলে আগামী দিনে দিল্লিতে সরকার গঠন করবে তৃণমূল’। তিনি আরও বলেন, ‘যখনই বিরোধীরা আমাদের পদপিষ্ট করতে চেয়েছে, মানুষের সমর্থন আরও বেড়েছে। তৃণমূলের এটাই বৈশিষ্ট্য, তৃণমূলকে যত প্রহার করা হবে, ভয় দেখান হবে তত সে আরও প্রস্ফুটিত হবে। আমাদের প্রার্থী রূপালি বিশ্বাস প্রয়াত বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী, তাঁর একটি দেড় বছরের ছেলে আছে, পরিবার এবং সন্তানের দায়িত্ব সামলেও তিনি আপনাদের কাছে আসছেন এটাই তৃণমূলের দায়বদ্ধতা। আজ আমাদের শপথ হোক আমরা বিজেপিকে দেশছাড়া করব, সিপিএমকে সর্বস্বান্ত করব,আর তার সঙ্গে সত্যজিতের খুনীদের উপযুক্ত শাস্তি দেব’।
এরপরে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আমাদের কাছে এবার সুযোগ এসেছে মিথ্যবাদী বিজেপিকে বাংলা এবং দেশ থেকে উৎখাত করার, এই সুযোগ আমরা কিছুতেই হাতছাড়া করব না। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে”।
তিনি বলেন, ‘ আবার যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাহলে ওরা আর নির্বাচনই করবে না, দেশের সংবিধান বদলে দেবে, মানুষকে মেরে ফেলবে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে, ২ কোটি বেকারের চাকরি হবে, স্কুল হবে, কলেজ হবে, বাংলাকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, এই হবে তাই হবে। কিন্তু হল কী? আচ্ছে দিনের নামে হল কাঁচকলা। ওরা একটা বেকারকেও চাকরি দেয় নি। যে হিন্দুধর্মের নামে ওরা পাঁচ বছর আগে ভোট চেয়েছিল ভোট মিটলে সেই হিন্দুধর্ম নিয়ে একটা কিচ্ছু করেনি। কখনও নোটবন্দী, কখনও এনআরসি, কখনও জিএসটি নিয়ে মানুষকে হয়রানি করেছে। দেশের মানুষ কি খাবে কি পড়বে তাই নিয়ে মাথা ঘামানো খালি, কাজের দিকে মন নেই’।
তিনি আরও বলেন, “ এই মাটি বিপ্লবীদের মাটি, নেতাজীর মাটি, শ্রী চৈতন্যের মাটি এই মাটিতে ওদের মিথ্যা কথা আর চলবে না। আজ এই বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, আমার মা-বোনেরা আগামী ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রচার করবেন আর ২৯ তারিখে ভোটের বাক্সে জবাব দেবেন বিজেপির যাবতীয় মিথ্যে কথার বিরুদ্ধে। মনে রাখবেন ভোটটা এমন ভাবে দিতে হবে যাতে মোদী যেভাবে বাংলাকে বঞ্চিত, লাঞ্ছিত করে রেখেছে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া যায়। বোতাম টিপবেন এখানে, কোমর ভাঙবে ওখানে। জোড়াফুলে ভোট দেওয়া মানে মোদীকে দেশছাড়া করা। আজকে বিজেপির বিরুদ্ধে যারাই লড়েছে তাঁদেরকেই ধমকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধমক দিয়ে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে তাঁর উন্নয়ন থামানো যাবে না, তিনি অন্যায়ের কাছে বশ্যতা স্বীকার করবেন না। মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলনের ভাষা তত তীব্র হয়েছে”।
অভিষেক আরও বলেন, “ বাংলার প্রতিটি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দেওয়া। আজ সংসারের কাজ ছেড়ে এই রোদ উপেক্ষা করে যারা এসেছেন তাঁরা শুধু বক্তৃতা শুনতে আসেননি তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন যে আগামী ২৩ মে ভারতীয় জনতা পার্টিকে দেশছাড়া করবেন। যাঁদের সঙ্গে নারীশক্তি থাকে তাঁদের কেউ রুখতে পারে না”।
এরপরে তিনি আরও বলেন, “ আমাদের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তোমরা আমাকে ৪২-এ ৪২ দাও আমি তোমাদের ধর্মনিরপেক্ষ ভারত দেব। তাঁর এই সেই নির্দেশকে পালন করার জন্যে, মোদীর সব ভাঁওতাবাজির জবাব দিতে গর্জে উঠুন ভোটবাক্সে। মনে রাখবেন একমাত্র তৃণমূলই সবসময় আপনাদের পাশে থাকে। সবার যে কোনও সমস্যাতে একমাত্র একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সমাধান খুজে বার করেন”।
বিজেপির ধর্ম নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি, রাম নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধেও মুখ খোলেন তিনি। বলেন, “ ওরা বুঝে গেছে রাম দিয়ে আর ভোট পাওয়া যাবে না। ২৩ তারিখে বাংলা এবং দেশ তৃণমূলময় হয়ে যাবে”। এরপরে মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এর আগের গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা আজকে দাম হয়েছে ৭৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এটাই আচ্ছে দিন”। এরসঙ্গেই পেট্রল-সহ নানা জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মোদীকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, “ ঠিক ভোটের আগেই কমল সব কিছুর দাম কারণ বিজেপি ভয় পেয়েছে। সব সমীক্ষা দেখিয়েছে আগামী দিনে ওরা গো-হারা হারছে। ওরা যত হারবে তত সবকিছুর দাম কমবে”।
তিনি আরও জানান, “ মোদীর এই দ্বিচারিতা আর চলবে না। এখন জয় শ্রী রামও আর চলছে না। এখন যদি ওরা বলেন জয় শ্রী রাম, মানুষ বলে রান্নার গ্যাসের কেন এত দাম? ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে দাঙ্গা করাই তোদের একমাত্র কাম। আচ্ছে দিনের নামে মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিল, ধংসস্তুপে পরিণত করেছে দেশকে। মোদীর আমলেই বেড়েছে বেকারত্ব, আজকে উনি সেনার নামে, ধর্মের নামে ভোট চাইছে এতটাই নির্লজ্জ উনি! আমি আজ যুবসমাজকে প্রশ্ন করতে চাই যে প্রধানমন্ত্রী দেশের সেনার নামে ভোট চায় তাঁকে কি ভোট দেওয়া উচিত? উত্তরে ‘না’-এর শব্দে কান পাতা দায়। এরপরে তিনি জানান, যে প্রধানমন্ত্রী ধর্মে ধর্মে বিভাজন করে সে আবার মানুষের কাজ করবে কি? উনি তো বিদেশ ভ্রমণেই ব্যস্ত”।
বক্তব্যের শেষে বলেন, “এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। তাই আসুন, ভোটবাক্সে জবাব দিন ওদের যাবতীয় মিথ্যে কথার। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।