একটি নয়, পরপর ছ’টি বিস্ফোরণ! সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর তিনটি গির্জায় তখন চলছিল ইস্টারের প্রার্থনা। হঠাৎ করেই জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ। পর পর তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো। মুহূর্তের মধ্যে মানুষের আর্তনাদ আর রক্তে কলম্বো হল থমথমে নিশ্চুপ। তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই ঘটনায় অন্তত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ২৮০ জনের বেশি। শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে নিহত দু’শোরও বেশি মানুষের মধ্যে তিন জন ভারতীয় বলে জানা গিয়েছে। তবে এই সংখ্যা তিন থেকে আরও বাড়তেও পারে বলে আশঙ্কা বিদেশ মন্ত্রকের।
রবিবার এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইট করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, “শ্রীলঙ্কা থেকে আসা খবরে দুঃখিত এবং মর্মাহত। কোনও হিংসার ঘটনাই অভিপ্রেত নয়। ইস্টার শান্তির উৎসব। আক্রান্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই”।
বাংলাদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকে দু’জন বাংলাদেশির কোনও খোঁজ মিলছে না। এঁদের এক জন প্রাপ্ত বয়স্ক, অপর জন শিশু। চার সদস্যের পরিবারটি শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিল। তবে নিখোঁজদের কোনও পরিচয় জানাতে পারেননি বিদেশমন্ত্রী। রবিবার সকাল পৌনে ন’টা থেকে শুরু করে, মোট আট বার ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে শ্রীলঙ্কার মাটি। বিভিন্ন গির্জায় চলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী একটি টুইট করে লিখেছেন, “ন্যাশনাল হসপিটাল ভারতীয় হাই কমিশনকে জানিয়েছে, ঘটনায় তিন ভারতীয় প্রাণ হারিয়েছেন। এঁদের মধ্যে আছেন লক্ষ্মী, এন চন্দ্রশেখর এবং রমেশ। বাকি তথ্য জানার কাজ শুরু করেছি আমরা।”
দুই বাংলাদেশি নিখোঁজের ব্যাপারে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, “আমরা আশা করছি, তাঁরা কোনও হোটেলে বা হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ হাইকমিশন নিয়মিত শ্রীলঙ্কার বিদেশ মন্ত্রকে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।” রবিবারের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে। তিনি জানান, বেশির ভাগ বিস্ফোরণের নেপথ্যে আছে আত্মঘাতী এনটিজে জঙ্গিরা। অন্য দিকে, শ্রীলঙ্কার গির্জায় যে হামলা হতে পারে দশ দিন আগেই তার ইঙ্গিত পেয়েছিল পুলিশ। সতর্কবার্তা জারি করেছিলেন শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান। শ্রীলঙ্কার দাবি, পুলিশ প্রধান পি জয়াসুন্দরা ১১ এপ্রিল এই মর্মে পুলিশ আধিকারিকদের সতর্কবার্তাও পাঠান। তাতে লেখা হয়েছিল, এনটিজে নামে একটি সংগঠন দেশের বিশিষ্ট গির্জায় হামলার চেষ্টা করছে। ভারতীয় হাই কমিশনও তাদের নজরে আছে।