তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগকে সোজা ব্যাটে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এতদিন কাজ করার পর এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্বরে এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, ‘২০ বছর চাকরির পর কি আমার এটাই প্রাপ্য?’ স্বাধীনোত্তর ভারতে এই প্রথম দেশের বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা করা হল। সত্যিই কি এটাই প্রাপ্য ছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর? না তা ছিল না বটে। তবে পুরোটাই যে সাজানো ঘটনা, বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা, তা অবশ্য শেষপর্যন্ত ধরা পড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, দিন দুয়েক আগেই শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেন কোর্টেরই এক মহিলা কর্মী। সেই অতি পরিচিত মিটু রাজনীতি। অতীতেও এই একই অভিযোগে দেশ বিদেশের অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব আক্রান্ত হয়েছেন। প্রধান বিচারপতি যদিও কোনও দিনই মোদী সরকারের পছন্দের লোক ছিলেন না। তিনি যখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, প্রধান বিচারপতি হননি, তখন কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, এরপর তিনি যখন চিফ জাস্টিসের চিফ জাস্টিসের চেয়ারে বসেন, তখন একাধিক মামলার রায় যায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। অপসারিত সিবিআই প্রধানকে পুনর্বহাল থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা ও পরিচালন সমিতির নীতির সমালোচনা, রাম মন্দিরের মতো স্পর্শকাতর বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান কিংবা রাফালের হারানো নথি তদন্তের অন্যতম সূত্র হতে পারে – ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শীর্ষ আদালত নিয়েছে গগৈয়ের আমলেই। আর ভোট মরশুমে সরকার বিরোধী বেশ কিছু মামলা যখন তাঁর টেবিলে, তখনই ষড়যন্ত্রের জাল পাতা হয়।
উল্লেখ্য, ওই মহিলা বছরখানেক আগেকার ঘটনা উল্লেখ করে একটি হলফনামা পেশ করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কাছে। সেইসঙ্গে মিডিয়ার হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে সেই হলফনামার কপি। প্রশ্ন উঠছে ঘটনাটি যখন বছর খানেক আগের, তাহলে ঠিক এই দেশের লোকসভা নির্বাচনের মুখেই তা সামনে আনা হচ্ছে কেন? মাস খানেক আগে যখন সকলের মধ্যে মিটু ক্যাম্পেনে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেছিল, তখনই বা কেন এই ঘটনা প্রকাশ্যে আনা হল না? ফলে, স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে কোনও বৃহৎ চক্র কাজ করছে এর পিছনে। তা না হলে এতো সংগঠিত ভাবে অভিযোগ ছড়িয়ে দিতে পারতেন না তিনি।
অবশ্য এই অভিযোগকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ইতিমধ্যেই দুই সদস্যের বেঞ্চ অভিযোগকারিনীর সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ না পেয়ে মামলা খারিজ করেছেন। এবং মিডিয়াকেও আরও দায়িত্ববান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর রঞ্জন গগৈ অভিযোগ অস্বীকার তো করেছেনই, পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারীদের একপ্রকার চিহ্নিত করে তিনি এক বিবৃতিও দেন যে, চেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলছিল। টাকাপয়সা নিয়ে কোনও দিক দিয়ে ফাঁসাতে না পেরে শেষে এই ‘নোংরা’ অভিযোগ এনে আমায় ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরা একইসঙ্গে দেশের বিচারব্যবস্থাকে কলুষিত করতে চায়। এই সব কিছুর জন্য বিচারব্যবস্থাই সঙ্কটে পড়ে গেছে।