তিনি দেশে ‘আচ্ছে দিন’-এর ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই তাঁকে সেই অবতারে দেখতে অভ্যস্ত দেশবাসী। ভোট প্রচারে বেরিয়ে সেবার তিনি ফেরি করেছিলেন ‘বিকাশ’-এর স্বপ্ন, দেশে আচ্ছে দিন আনার স্বপ্ন। দেশবাসীর কাছে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরীর। বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে এনে গরিব মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে অর্থ প্রদানের। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। আদতে হয়েছে ক্যাঁচকলা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৫ বছরের মেয়াদ শেষে দেখা যাচ্ছে সেই সকল প্রতিশ্রুতিই ছিল এক-একটা জুমলা। তাঁর আমলে কোনও বিকাশই হয়নি দেশবাসীর। বরং ভেঙে পড়েছে দেশের অর্থনীতি।
এই মুহূর্তে আবারও এক লোকসভা নির্বাচন চলছে দেশে। ফের একবার স্বপ্নের ফেরিওয়ালার ভূমিকায় অবতীর্ণ মোদী। তবে এইবার আর বিজেপিকে ভোট নয়। এবার ভিডিও মারফত জুমলাবাজ মোদীর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আর্জি জানালেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। সম্প্রতি ‘আউটসাইড পার্লামেন্ট’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ক্যাম্পেন শুরু করেছেন ডেরেক। রোজই একটি করে ভিডিও মারফত উপযুক্ত তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে বিজেপির সমালোচনায় সরব হচ্ছেন তিনি। বুধবার ‘৫ প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তব’ শিরোনামে যে ভিডিওটি প্রকাশ পেয়েছে, তাতে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ নিয়ে মুখ খুলেছেন ডেরেক৷
ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, এক সুইমিং পুলে রয়েছেন সাংসদ। সেখান থেকেই তিনি বলেন, ‘আউটসাইড পার্লামেন্টে প্রতিদিনই আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছি, যা নিয়ে বিজেপি তাদের প্রচারের সময় মুখ খুলছে না। আমাদের আজকের বিষয় বিজেপির পাঁচ প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তব।’ এরপর তিনি বলেন, ‘বিজেপির প্রথম প্রতিশ্রুতিই ছিল কর্মসংস্থান। বছরে ২ কোটি নতুন চাকরি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু আমরা সবাই জানি তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং পাঁচ বছরে বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। আমরা সবাই জানি এই দেশে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশ। এটাই ভারতে শেষ ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের হার। তবে বাংলায় বেকারত্বের হার কিন্তু ৪০ শতাংশ কমেছে।’
দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে ডেরেক বলেন, ‘মোদীজি দাবি করেছিলেন যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন। কিন্তু এখনও তিনি তা দ্বিগুণ করতে পারেন নি। তবে বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা করে দেখিয়েছেন। আর সেটা দ্বিগুণ নয়, তিনগুন। বিজেপি আসার আগে দেশে এই আয়ের হার ছিল ৪.২ শতাংশ আর শেষ পাঁচ বছরে সেটা ৩ শতাংশের নীচে চলে গেছে। সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রতি ঘন্টায় একজন করে কৃষক আত্মহত্যা করছেন।’ তাঁর দাবি, ‘তৃতীয় প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয় নি। ২০১৪-র প্রচারে যে প্রতিশ্রুতি দিতে বেশি দেখা গেছিল। কালো টাকা ফেরত আনা, সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে অর্থ প্রদান- কোনওটাই হয়নি। প্রতিশ্রুতির মত কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। পার্লামেন্টে অর্থমন্ত্রী নানা বিষয়ে কথা বললেও এ বিষয় নিয়ে চুপই থেকেছেন।’
ডেরেকের প্রশ্ন, ‘পানামা পেপার নিয়ে মিডিয়া কোনও স্টোরি করেনি কেন? কেন সেইসব গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না ওই পেপারে ছিল?’ তিনি বলেন, নীরব মোদী, বিজয় মালিয়ার মত ব্যক্তিদের ঘটনাও আমরা জানি। আর প্রতিশ্রুতি ছিল লোকপাল নিয়োগ করা নিয়ে। সেটা এখন হয় নি। চতুর্থ প্রতিশ্রুতিতে নারী সংরক্ষণ বিলের প্রসঙ্গ তোলেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর কথায়, ‘এখনও এই বিল পাশ হয়নি লোকসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের ৪১ শতাংশ সাংসদই মহিলা। সেখানে বিজেপির মাত্র ১২ শতাংশ।’ এরপরই পঞ্চম প্রতিশ্রুতি হিসেবে নতুন বিচারব্যবস্থার প্রসঙ্গও তোলেন ডেরেক। তাঁর দাবি, ‘কিছুই হয়নি। আমরা সেই বহুচর্চিত ছবিটার কথা সবাই জানি। সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিক সম্মেলনের ছবি। সুপ্রিম কোর্টে ৯টি খালি পদ আছে। হাইকোর্টে আছে ৪১৭ ও নিম্ন আদালতে আছে ৫৫০০ খালি পদ। কিন্তু কিছুই হয়নি।’
এই ছবিটা তুলে ধরেই ডেরেক সাফ জানান, এই ছিল ২০১৪-র বিজেপির ইস্তেহারের কিছু প্রতিশ্রুতির আসল চিত্র। এই এত ইস্যুর কথা মাথায় রেখেই আপনারা ভোট দেবেন। সব শেষে তিনি বলেন, বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণের হার এতটাই খারাপ যে বাস্তব ছবিটা খুবই ভয়ংকর। আমি নিশ্চিত ২৩ মে ভোটের ফলাফল বেরালেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, বিজেপি এবার আর ক্ষমতায় আসছে না।