বাংলার হাল ধরার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পের উন্নয়নের দিকে নজর রেখেছেন৷ তাঁর উদ্যোগেই রাজ্যে শিল্পের জোয়ার এসেছে৷ আর এবার এই উন্নয়নের শরিক হতে টাটাদের একটি সংস্থা, টাটা স্পঞ্জ আয়রন লিমিটেডের সদর দফতর উড়িষ্যা থেকে চলে আসছে কলকাতায়। এটি টাটা স্টিলের অন্তর্গত একটি সংস্থা। বৃহস্পতিবার টাটা স্পঞ্জ বোর্ডের বৈঠকে দফতর স্থানান্তর করণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই খবর রাজ্যের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে বলেই মনে করছে শিল্পমহল।
প্রসঙ্গত, মমতার আমলে রাজ্যে নতুন শিল্পনীতি, জমিনীতি শিল্পস্থাপনের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। ই-গভর্ন্যান্সে বাংলা এখন এক নম্বরে। আবার ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পেও বাংলা এক নম্বরে। রাজ্যে কর্মসংস্থান বেড়েছে। সিলিকন ভ্যালিতে শিল্পের জন্য জমি তৈরি রয়েছে। এখন আর কোনও শ্রমদিবস নষ্ট হয় না বাংলায়। বাংলায় সবচেয়ে বেশি দক্ষ শ্রমিক রয়েছে। রাজ্যে তাই বিনিয়োগ টানতে রাজ্য সরকার এক গুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিদেশ সফরে গিয়ে এ রাজ্যে শিল্পে আরও লগ্নি করার জন্য আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে খবর।
এছাড়া, প্রতি বছর রাজ্য সরকার বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে দেশ-বিদেশের বড় বড় শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিরা যোগ দেন। শিল্প সম্মেলনেও বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া যায়। পরে ধাপে ধাপে সেই কাজ এগোয়। বিনিয়োগ টানতে এই ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করে শিল্প সংস্থা। কারণ সেখানে সরাসরি জানা যায় সংশ্লিষ্ট রাজ্যে কী রকম পরিকাঠামাে রয়েছে, শিল্পে বিনিয়ােগ করলে প্রশাসনের কী সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।
এখন টাটা স্পঞ্জ আয়রন লিমিটেড নথিভুক্ত দফতর রয়েছে উড়িষ্যার কেওনঝড়ের জোডায়। সেখানে তাদের কারখানাও রয়েছে। ওই কারখানায় বছরে তিন লক্ষ নয় হাজার টন স্পঞ্জ আয়রন উৎপাদিত হয়। পাশাপাশি টাটা স্পঞ্জ আয়রন লিমিটেডের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন নাম হতে পারে টাটা স্টিল লং প্রোডাক্টস লিমিটেড।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে শুরু হয় টাটা স্পঞ্জের পথ চলা। টাটা স্টিল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ উড়িষ্যা লিমিটেড (আইপিকোল)- এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ওই সংস্থাটি। ১৯৯১ সালে টাটা স্টিল আইপিকোল-এর অংশীদারিত্ব কিনে নিয়েছে। এখন টাটা স্পঞ্জে টাটা স্টিলের ৫৪.৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি কলকাতা কেন্দ্রিক শিল্প সংস্থা ঊষা মার্টিনের স্টিলের ব্যবসা কিনে নেয় টাটা স্টিল।
কলকাতায় টাটাদের তিনটি নথিভুক্ত সংস্থা রয়েছে। সেগুলি হল টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস লিমিটেড (যার আগের নাম ছিল টাটা টি), টাটা মেটালিকস এবং টাটা টিন প্লেট। অন্যদিকে, এ রাজ্যে টাটাদের সংস্থাগুলোর মধ্যে টাটা কনসালটেন্সি লিমিটেড সবথেকে বড় সংস্থা। কর্মী-সংখ্যার নিরিখে এটি এ রাজ্যের
সবথেকে বড় বেসরকারি সংস্থাও। সেখানে কুড়ি হাজার বেশি কর্মী রয়েছেন। তারা এ রাজ্যে বিনিয়োগ আগ্রহী, এর আগে টাটারা এমন বার্তা দিয়েছে।
গত বছর জুলাইয়ে টাটা সন্স-এর চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখর জানিয়েছিলেন, টাটা গোষ্ঠী বাংলার প্রতি দায়বদ্ধ। যারা উপযুক্ত সময় খুঁজছেন সেখানকার টিসিএস ক্যাম্পাসে ২০ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছেন। স্টারবাকস, টিজিবিএল-ও রয়েছে। ঠিক সময় এলে বিনিয়োগ করা হবে। সেই মতোই এবার উন্নয়নের বাংলায় বিনিয়োগ করছে তারা। উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে টাটা হিটাচির দফতর জামশেদপুর থেকে সরিয়ে কলকাতায় আনা হয়েছিল। রাজ্যে টাটাদের বেশ কয়েকটি সংস্থার সদর দফতরও রয়েছে।