দেশে আচ্ছে দিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু বিগত ৫ বছর ধরে শুধু ‘বিকাশ’-এর স্বপ্ন ফেরি করা ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকি মোদীর আমলে খারাপ হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার হাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে পোস্ট করা ‘প্রধানমন্ত্রী হিসাব দাও’ শিরোনামের একটি ভিডিওতে হরিয়ানার একটি গ্রামের এক স্কুলছুট ছাত্রীকে বলতে শোনা যায়, “প্রধানমন্ত্রীর ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ স্লোগানের সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই। শুধু এই কারণেই কত মেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, সেই হিসাব আপনি রেখেছেন?” এবার মোদী জমানায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থার শোচনীয় হাল নিয়ে মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আউটসাইড পার্লামেন্ট’ নামে একটি ক্যাম্পেন শুরু করেছেন ডেরেক। তারই একটি ভিডিওতে গোটা দেশ ও তারই পাশাপাশি বাংলার শিক্ষার হালচাল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে দেখা গেল তাঁকে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ছোটদের পার্কের এক দোলনায় দোদুল্যমান ডেরেক। সেই অবস্থাতেই স্বতস্ফূর্ত ভাবে তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আজ আমরা কিডস পার্কে। কারণ আজ আমরা কথা বলব শিক্ষা নিয়ে। আমরা রোজ এমন কিছু নিয়ে কথা বলি যা নিয়ে বিজেপি বা মোদী-শাহরা কখনও কথা বলে না। প্রথমেই যেটা বলার, ভারত এখন সবচেয়ে বড় নিরক্ষর দেশ। কিন্তু সরকারে থাকা বিজেপি শিক্ষা নিয়ে কি ভাবে? কি করেছে তারা বাচ্চাদের জন্য? কী করেছে দেশের যুবদের জন্য? ৫ শতাংশ থেকে কম জিডিপি ব্যয় করেছে বিজেপি। যেখানে তৃণমূল, ৫ থেকে ৬ শতাংশ করেছে। এ তথ্য তৃণমূলের ইস্তেহারে আছে।’
বিজেপি সরকারের সমালোচনায় তিনি এ-ও বলেন যে, ‘বিজেপি ২০১৪ তে বলেছিল বাচ্চাদের লেখাপড়া নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু ৫ বছর পর ২টো কমিটি আর ১ লাখের বেশি কন্সালটেশন পলিসি এখনও কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল, উচ্চ শিক্ষা কমিশন তৈরি করবে। কিন্তু তেমন কিছুই বিজেপি করে উঠতে পারেনি। শিক্ষার জন্য মোদী সরকার যা যা বলেছিল সেগুলোর কাজ এখনও শেষই হয়নি। অর্ধেকের বেশি কাজ হয়ইনি। যেমন বিজেপি উচ্চ শিক্ষা কমিশন করবে বলেছিল, কিন্তু তা করেনি।’ ডেরেক জানান, ‘দেশে নিরক্ষর শিশুর সংখ্যা বেশি। স্কুল মুখী করতে মোদী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মেয়েদের শিক্ষার কোনো প্রসারই ঘটায়নি তারা। ভারতে শিশু শিক্ষা নিয়েও প্রবল সমস্যা। কিন্তু অন্যদিকে রয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যারা অনেক প্রকল্প করেছে শিক্ষাক্ষেত্রে। স্কুলমুখী করে তুলেছে রাজ্যের শিশুদের।’
এরপরই নারীশিক্ষা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন তিনি। ভিডিওয় ডেরেক বলেন, “এবার আমরা কথা বলব নারীশিক্ষা নিয়ে। মোদীর ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের পুরোটাই দুর্নীতি। এটা মোট ৬৪৪ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি। এই টাকার অর্ধেকও ব্যবহার হয়নি ওই প্রকল্পে। কারণ ৫৬ শতাংশ টাকা ব্যবহার করা হয়েছে শুধুমাত্র প্রকল্পের প্রচারেই। কথা হল, যদি কাউকে সমালোচনা করতে হয় তাহলে শুধু সমালোচনা করলেই চলে না। কাজে করে দেখাতে হয়। আমরা যেমন কেন্দ্রকে বলছি, তুমি যা করেছ আমরা তার থেকে ভাল কাজ করেছি। কারণ বাংলার ‘কন্যাশ্রী’ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। ৬০ লক্ষ মেয়ে এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছে। এবং এই প্রকল্প পেয়েছে জাতিসঙ্ঘের পুরস্কার। এই প্রকল্পের ফলেই মেয়েদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার হার ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
বাংলার কথা বলতে গিয়ে তিনি এ কথাও জানান যে, ‘বাংলায় স্কুলছুটের হার অনেকাংশে কমেছে। আগের বছরের সমীক্ষা অনুযায়ী, যা আগে ছিল ৮০০০, তা এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৩০০ তে। আর এমনটা আশা করা হচ্ছে যে, শীঘ্রই এই স্কুলছুটের হার ১০০-র নিচে নিয়ে চলে আসবে বাংলার মমতা সরকার।’ শুধু তাই নয়, ভিডিওয় তিনি দাবি করেন, ‘৭ হাজার প্রাইমারি স্কুল, ২৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৫০ এর বেশি নতুন কলেজ তৈরি হয়েছে বাংলায়। পূর্ব ভারতের প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে মমতার আমলেই। বাংলা তাদের খরচের প্রায় ১৮.৩ শতাংশ টাকা খরচ করেছে শিক্ষায়।’ ভিডিওটি দেখার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবশেষে সুবক্তা ডেরেক বলেন, ‘পরবর্তীকালে তৃণমূল সরকারের আমলে শিক্ষা কোথা থেকে কোথায় যায় সেটাই দেখার। এটা চমক হিসেবেই থাক।’