লোকসভা নির্বাচন শুরুর আগেই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ৬৬ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা চিঠি দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সাধারণ নির্বাচনের দোরগোড়ায় বিজেপির বহু নেতার বিরুদ্ধে একাধিকবার নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ ওঠা স্বত্ত্বেও, নির্বাচন কমিশন কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। ঠিক একই ভাবে প্রাক্তন আমলাদের পরে এবার ভোট মরশুমে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সরব হলেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কমিশন যে ভাবে চোখ বন্ধ করে রয়েছে, তাতে কমিশনের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাত’-এর অভিযোগ উঠেছে বলে আজ একটি বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। বালাকোট অভিযানের প্রসঙ্গ তুলে ভোট চাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর কপ্টার থেকে রহস্যজনক বাক্স উদ্ধারের মতো ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নিয়ে কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলছে বলেই মত কুরেশির।
প্রসঙ্গত, কুরেশি মুখ্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে ছিলেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, নিজের কর্তব্য করা সত্ত্বেও কমিশন যে ভাবে এক নির্বাচনী অফিসারকে সাসপেন্ড করেছে, তা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। এতে কমিশন ও প্রধানমন্ত্রী দু’পক্ষই নিজেদের গরিমা হারিয়েছে। সম্প্রতি সম্বলপুরের একটি সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। হেলিপ্যাডে থাকা প্রধানমন্ত্রীর কপ্টারে আপত্তিজনক কিছু রয়েছে কি না, তা দেখতে যান ওই রাজ্যে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে মোতায়েন কর্নাটক ক্যাডারের আইএএস অফিসার মহম্মদ মহসিন। তল্লাশিতে অবশ্য কিছুই মেলেনি। কিন্তু কেন প্রধানমন্ত্রীর মতো এসপিজি নিরাপত্তাধারীর কপ্টারে তল্লাশি চালানো হয়েছে, সেই অভিযোগে মহসিনকে সাসপেন্ড করে কমিশন। যা নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। এর আগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সচিব ই এ এস শর্মা এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে চিঠি দেন কমিশনকে। তার পরেই আসে কুরেশির বিবৃতি।
কুরেশির বক্তব্য, কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর পদ— দু’টিই সর্বদা জনতার আতসকাচের নীচে রয়েছে। অথচ, ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী বারবার আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। অথচ চোখ বুজে রয়েছে কমিশন। এতে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রীর চপারে তল্লাশির ঘটনাটিকে ইতিবাচক ভাবে দেখানোর সুযোগ ছিল উভয় পক্ষের কাছে। আইনের চোখে একজন প্রধানমন্ত্রী ও সাধারণ মানুষের মাপকাঠি যে একই— এই বিষয়টি তুলে ধরতে পারত কমিশন। কুরেশির কথায়, ‘উভয় শিবিরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ওই একটি পদক্ষেপে ধুয়েমুছে যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, দু’পক্ষই উল্টো রাস্তা নিয়েছেন।’ উল্লেখ্য, রৌরকেল্লায় উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের কপ্টারেও তল্লাশি চালায় কমিশনের ফ্লাইং স্কোয়াড। তা নিয়ে কুরেশি লিখেছেন, ‘তল্লাশির সময়ে পট্টনায়কের মনোভাব তারিফযোগ্য। গোটা বিষয় তিনি যে ভাবে সামলেছেন, তা তাঁর ভাবমূর্তিকেই উজ্জ্বল করেছে। দেশের নেতাদের কাছে এ ধরনের আচরণই প্রত্যাশা করে জনগণ।’ নাট্যকার, ছবি নির্মাতা, শিল্পী ও প্রাক্তন আমলাদের পর এবার এক প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারই কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে কর্তারা।