গতকাল যেন রুপকথার দিন৷ এক রাজপুত্র যখন জয়ের উল্লাসে মাতোয়ারা, আর এক জন তখন তলিয়ে যাচ্ছেন হতাশার অন্ধকারে৷ গতকাল যেভাবে কলকাতা পর্যুদস্ত হল বিরাট বাহিনীর কাছে, ক্রিকেটপ্রেমীরা তা মনে রাখবেন অনেক দিন৷
বিরাট শুরুতে ছিলেন বেশ নড়বড়ে। প্রথম বলেই তিনি স্লিপে ক্যাচ তুলে অল্পের জন্য বেঁচে যান। পরের ওভারে সুনীল নারিনের দ্বিতীয় বলে কোহলির বিরুদ্ধে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন ওঠে। আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নেন কেকেআর ক্যাপ্টেন দীনেশ কার্তিক। তবে সেটা কাজে লাগেনি। বিরাট ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে কোহলির ডুয়েল দারুণ জমে উঠেছিল। কিং কোহলিকে বাউন্সারে পরাস্ত করার কৌশল নিয়ে ব্যর্থ হন কেকেআরের ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারটি। বিরাট হুক করে বল সোজা পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে।
আরসিবি শেষ ৫ ওভারে তুলল ৯১ রান। কেকেআর ৮২। দু’দলের শেষ ৬ ওভারের হিসেব ধরলে রান উঠল মোট ২০৫! আইপিএল ছেড়ে দিন, কস্মিনকালে কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যা ওঠেনি। দু’দলের ব্যাটসম্যানরা মোট ছয় মারলেন ২৬টি! এর পরে বোলারেরা যদি সাইটস্ক্রিনের নিরাপত্তা দাবি করেন, অন্যায় কোথায়। কোহালি (১০০) সেঞ্চুরি করলেন ৫৮ বলে, মইন ৬৬ করলেন ২৮ বলে! কিন্তু ২১৩ রানের লক্ষ্যও টপকে যেতে পারত কেকেআর। পারল না নিজেদের দলবদ্ধতার অভাবে৷
তবে চোট সারিয়ে মাঠে নেমে কার্যত তান্ডব করলেন রাসেল৷ রাসেলের ফিটনেসটা একটু অন্য ধরনের। তিনি দ্রুত ছোটেন না, কিন্তু কার্ডিয়ো এবং ওয়েটলিফ্টিং করে নিজেকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, সেখানে তাঁর টেকনিক নিয়ে আর কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন না।
তবে আরও ভাল হওয়া উচিৎ ছিল দীনেশ কার্তিকের অধিনায়কত্ব। বোলিংয়ের সময় বারেবারে অহেতুক ফিল্ডিং বদলালেন। এক বার থার্ডম্যানকে তুলে আনলেন বৃত্তের মধ্যে। কোহালির মিসহিট পুল ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে থার্ডম্যানেই পড়ল। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রশ্ন, এত বড় রান তাড়া করতে নেমেও কার্তিক কেন রাসেলকে চারে পাঠালেন না?
রাসেল নামলেন সেই ছয়ে। আর গোটা দুয়েক বল তিনি বেশি পেলে কেকেআরের ইডেনে টানা তিন নম্বর ম্যাচ হারতে হয় না।
স্কোরবোর্ড বলছে, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ১০ রানে হারিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। কিন্তু এটা বলছে না, রাসেল (২৫ বলে ৬৫, দুটি চার, ন’টি ছয়) নামক কালবৈশাখী কী তাণ্ডব তুলে দিয়েছিল ক্রিকেটের নন্দনকাননে। তবে রাসেল ঝড়ে সবাই নাকানিচোবানি খেলেও শেষ হাসি হাসলেন বিরাটই৷