‘জীবনের প্রথম ভোট বাংলার পক্ষে দেবে, না বিপক্ষে দেবে, সিদ্ধান্ত তোমার, পছন্দ তোমার।’ এবার গানের জাদুতেই প্রথম ভোটারদের মন জয় করে নিল তৃণমূল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলতে আজ, শনিবার ২০শে এপ্রিল বেলা ১২ টায় আবারও নতুন গান নিয়ে হাজির হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ‘প্রথম ভোট বাংলার পক্ষে না বিপক্ষে’ – এই কথাটি যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর ভাবনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী গানের বাকি কথা লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন রূপম ইসলাম। দলের কর্মী-সমর্থকরা যাতে বিভিন্ন ভাবে গানটিকে কাজে লাগিয়ে ভোটের প্রচার করতে পারেন, সেই কথা মাথায় রেখেই গানটি বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জোড়াফুল শিবির। র্যাপের মতো করেই বাঁধা হয়েছে গানটি। এবং ইতিমধ্যেই তা ভাইরাল।
এই গান সম্পর্কে তৃণমূলের কমিউনিকেশন সেলের অভিভাবক এবং সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘গানটি যে ভাবে বানানো হয়েছে, তাতে ইচ্ছেমতো কর্মী-সমর্থকেরা তা নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে পারেন। প্রচারের সময় গান হিসেবে চালানো যেতে পারে। আবার কেউ চাইলে এই গানে পছন্দসই ভিডিও বসিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দিতে পারেন। পথসভা চলাকালীন নাচ বা অন্যান্য পারফরম্যান্সও করা যেতে পারে এই গানের সাহায্যে।’ প্রচার-গানটি নিয়ে বার্তা দিয়েছেন অভিষেক নিজেও। তাঁর কথায়, ‘বাংলার যুব প্রজন্মের কাছে আহ্বান, আগামী এক মাসে এই র্যাপ গানটি নানাভাবে ব্যবহার করো। নাচের মাধ্যমে, ভিডিওর মাধ্যমে, ফ্ল্যাশ মব কিংবা তোমাদের যেভাবে মন চায়, সেভাবে নিজেদের শৈল্পিক চিন্তাকে উন্মুক্ত করো।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল গানের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক লিরিক ফরম্যাট অর্থাৎ অ্যানিমেশন এর মাধ্যমে গানের কথা ভেসে উঠছে মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনে। হ্যাঁ, অধুনা ইউটিউবে দাপিয়ে বেড়ানো আধুনিক লিরিক ভিডিওর মাধ্যমে ও অ্যানিমেশনের সাহায্যে ভোট-বার্তা তুলে ধরা হয়েছে নয়া প্রজন্মের সামনে। গানের শুরুতেই বলা হচ্ছে, ‘এবারের ভোট যাদের জীবনের প্রথম ভোট/ তারা জেনে নাও, বুঝে নাও, শুনে নাও, গুণে নাও/ জীবনের প্রথম ভোট বাংলার পক্ষে দেবে, না বিপক্ষে দেবে, সিদ্ধান্ত তোমার, পছন্দ তোমার।’ এছাড়াও গোটা গানে তৃণমূল শাসনে বাংলার উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এসেছে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, শিক্ষাশ্রী, রূপশ্রী এবং সবুজ সাথী প্রকল্পের কথা। কন্যাশ্রী প্রকল্পে সাত লক্ষ মহিলার উন্নতি, রূপশ্রী প্রকল্পে ২৫,০০০ টাকা, সাত বছরে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি, ৭০ লক্ষ তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়া, সবুজ সাথী প্রকল্পে এক কোটি সাইকেল বিতরণের কথা বলা হয়েছে এই গানে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে একদিকে যখন দেশজুড়ে বেকারত্ব বাড়ছে, তখন বাংলায় গতিধারার হাত ধরে স্বাবলম্বী হয়েছে বেকার যুবক-যুবতীরা। রাজারহাটে তৈরী হচ্ছে সিলিকন ভ্যালি হাব – যা খুলে দেবে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত। ফিফা অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের পর বাংলার যুবভারতী আজ দেশের সেরা স্টেডিয়াম। তাই গানের মাধ্যমে বলা হয়েছে, প্রথম ভোটারদের ‘ডিসিশন নিতে হবে’। তাদের ভোটটা বাংলার পক্ষে হবে না বিপক্ষে হবে? সিদ্ধান্ত ও পছন্দ সম্পূর্ণ নতুন ভোটারদের। এই গানে তাদের সিদ্ধান্তটা সহজ করে দিতে বাংলার গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা বলা হয়েছে। প্রথম ভোটটা শান্তি, প্রগতি, উন্নতির পক্ষে, দেশের ও বাংলার পক্ষে দেওয়ার জন্যই আবেদন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, জাতীয় লোকসভা নির্বাচনে তারুণ্যের প্রভাব হবে অনস্বীকার্য। প্রায় ৫ কোটি নতুন ভোটার প্রথমবার তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ২০ লক্ষ নতুন ভোটারই বাংলায়।
গানে তাই তাঁদের উদ্দেশ্য করে এ কথাও বলা হয়েছে যে, ‘নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন উড়ান নতুন ডানা পাবে।’ শুধু তাই নয়, জীবনের প্রথম ভোট দিতে যাওয়ার আগে তাঁদের এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ‘ভরসা উশুল, তৃণমূল জোড়াফুল/ ভরসায় নেই ভুল, জোড়াফুল তৃণমূল।’ ভিডিওর শেষে বাংলার উন্নয়ন এবং অধিকারের স্বার্থে, ধর্মনিরপেক্ষ-প্রগতিশীল সরকার গড়ার লক্ষ্যে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে প্রথম ভোটারদের উদ্দেশ্যে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ এপ্রিল ভোটের প্রচার উপলক্ষ্যে ভিডিওর মাধ্যমে প্রথম নির্বাচনী গান প্রকাশ করেছিল তৃণমূল। ঝকঝকে গ্রাম বাংলার পাশাপাশি শহরের উন্নয়নের ছবি দেখা গিয়েছিল সেই ভিডিওতে। খুটিনাটি বাঙালিয়ানায় ভরপুর আড়াই মিনিটের ভিডিওয় সেবার বাংলার মা-মাটি-মানুষের সুর বেঁধে দিয়েছিল তৃণমূল। আর এবার গানের মাধ্যমে প্রথম ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথকে আরও মসৃণ করে দিল মমতার দল।