গত ১০ মার্চ লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ওইদিন থেকেই লাগু হয়ে গেছে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল নির্বাচনী প্রচারে কোনও দল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনও কীর্তি, কার্যকলাপ এবং ছবি তাদের প্রচারে ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তরুণদের কাছে ভোট চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ওই আবেদন জানিয়েছিলেন লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার আগে। বালাকোটে অভিযানের কথা বলে ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা নিয়ে আজ দ্বিতীয় পর্বের ভোটগ্রহণ মিটে যাওয়ার পরেও সিদ্ধান্ত জানাতে পারল না কমিশন। ওই প্রসঙ্গে আজ উপনির্বাচন কমিশনার চন্দ্র ভূষণ কুমার বলেন, ‘মহারাষ্ট্র থেকে রিপোর্ট এসে গিয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
প্রসঙ্গত, দিন দশেক আগে মহারাষ্ট্রের লাতুরে একটি জনসভায় নতুন ভোটারদের উদ্দেশে মোদী বলেছিলেন, তাঁরা যেন বালাকোট অভিযানের কথা মাথায় রেখে ভোট দেন। ওই বক্তব্য নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। সেনাবাহিনীর নাম করে প্রধানমন্ত্রী ভোট চেয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধীরা। ঘটনার পরে লাতুরের নির্বাচনী আধিকারিক একটি রিপোর্ট পাঠান দিল্লিতে। কমিশন সূত্রের খবর, ওই আধিকারিক তাঁর রিপোর্টে জানান, প্রধানমন্ত্রী ওই কথা বলে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চই নির্বাচন কমিশন থেকে প্রচারিত নির্বাচনী নিয়মাবিধিতে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে দেওয়া হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনও দল বা প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনী প্রচারে সময় যেন সেনাবাহিনীকে তাদের প্রচারে জড়িত করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু অভিযোগ শব্দটা যে মোদীর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে সবসময়। আদর্শ আচরণ বিধিকে থোড়াই কেয়ার করেন তিনি!
অন্যদিকে, যে হেতু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদর্শ আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে, তাই শুরু থেকে সাবধানে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। বিষয়টি পাঠানো হয় কমিশনের আচরণবিধি সংক্রান্ত কমিটির কাছে। কিন্তু ঘটনার দশ দিন পরেও কেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি, তা নিয়ে এখনও কোনও উত্তর দিতে পারেননি কমিশনের আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী লাতুরের জনসভায় সেনা প্রসঙ্গে যে যে কথা বলেছিলেন, প্রথমে তা খতিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় পরবর্তী ধাপে মোদীর ওই দিনের গোটা ভাষণের ট্রান্সক্রিপ্ট চেয়ে পাঠায় দিল্লি। কমিশনের আধিকারিকেরা ওই ট্রান্সক্রিপ্ট এখনও বিশ্লেষণ করেছেন। যদিও কমিশন শেষ পর্যন্ত তেমন ‘সাহসী’ পদক্ষেপ করতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দিহান কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র পবন খেড়া আগেই জানিয়েছিলেন, ‘ওই মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কী সাজা হতে পারে, তা নিয়ে দেশবাসীকে অন্ধকারে রেখেছে কমিশন। তাদের উচিত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।’