বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নলহাটির হরিপ্রধান হাইস্কুল মাঠে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য মাতৃবিয়োগের পরেও যেভাবে অনুব্রত দলের কাজে যোগ দিয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। সভায় উপস্থিত সমস্ত নেতাকর্মীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। আজ এই সভা বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের সমর্থনে হয়েছে।
বক্তব্যের প্রথমেই তিনি বলেন, “আজ এই তীব্র রোদের মধ্যেও যেভাবে সবাই এসে উপস্থিত হয়েছেন তাতে করে বোঝা যাচ্ছে সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরেই আস্থা রেখেছেন। আমার স্থির বিশ্বাস আজ যারা এসেছেন তাঁরা আগামী ২৩ মে বিজেপিকে দেশছাড়া করবেন”।
এরপরে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে”।
তিনি আরও বলেন, “ আজ এই বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, আমার মা-বোনেরা আগামী ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রচার করবেন আর ২৯ তারিখে ভোটের বাক্সে জবাব দেবেন বিজেপির যাবতীয় মিথ্যে কথার বিরুদ্ধে। মনে রাখবেন ভোটটা এমন ভাবে দিতে হবে যাতে মোদী যেভাবে বাংলাকে বঞ্চিত, লাঞ্ছিত করে রেখেছে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া যায়। বোতাম টিপবেন এখানে, কোমর ভাঙবে ওখানে। জোড়াফুলে ভোট দেওয়া মানে মোদীকে দেশছাড়া করা। আজকে বিজেপির বিরুদ্ধে যারাই লড়েছে তাঁদেরকেই ধমকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধমক দিয়ে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে তাঁর উন্নয়ন থামানো যাবে না, তিনি অন্যায়ের কাছে বশ্যতা স্বীকার করবেন না। মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলনের ভাষা তত তীব্র হয়েছে”।
মোদীকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে, ২ কোটি বেকারের চাকরি হবে, স্কুল হবে, কলেজ হবে, বাংলাকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, এই হবে তাই হবে। কিন্তু হল কী? আচ্ছে দিনের নামে নোটবন্দী করে মানুষকে হয়রানি করা হল, আর নীরব মোদী টাকা নিয়ে পালাল আর নিজে বিশ্ব ভ্রমণ করছে। গ্যাসের দাম বাড়ল আর দিল্লীতে বিজেপির নেতারা সেভেন স্টার পার্টি অফিস তৈরি করল। ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই আচমকা ভোটের আগেই গ্যাসের দাম কমে গেল। তাই যদি আচ্ছে দিন কারোর এসে থাকে তাহলে তা শুধুমাত্র মোদী এবং অমিত শাহের। তাই আমাদের এমন ভাবে লড়তে হবে যাতে গতবারের থেকেও শতাব্দী রায়কে আরও বেশি ভোটে জেতানো যায়”।
আজকের সভায় মানুষের উছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মত। অভিষেক বলেন, “ ওরা মানুষকে মিথ্যা কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল এবার আর সেই ভাঁওতাবাজি চলবে না । ২৩ তারিখে বাংলা এবং দেশ তৃণমূলময় হয়ে যাবে”। এরপরে মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এর আগের গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা আজকে দাম হয়েছে ৭৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এটাই আচ্ছে দিন”। এরসঙ্গেই পেট্রল-সহ নানা জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মোদীকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, “ ঠিক ভোটের আগেই কমল সব কিছুর দাম কারণ বিজেপি ভয় পেয়েছে। সব সমীক্ষা দেখিয়েছে আগামী দিনে ওরা গো-হারা হারছে। ওরা যত হারবে তত সবকিছুর দাম কমবে”।
তিনি আরও বলেন, “ ৩৪ বছরের সিপিএম-এর পাপের বোঝা আজও আমরা মেটাচ্ছি। কিন্তু মানুষের কাছে থেকে এক টাকাও অতিরিক্ত কর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাননি। এটাই মোদীর সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। মোদী বলেছিল ক্ষমতায় এলে বাংলাকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেব, কাজের বেলায় হল উল্টো। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত প্রকল্পের টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন। জমির পাট্টা থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ রাস্তাঘাট, হাসপাতাল সবকিছু দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছেন। এবারের ভোটেই আপনারা সুযোগ পেয়েছেন মোদীকে দেশ ছাড়া করার সেই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। টিভির পর্দায় যখন দেখবেন ওরা সব জায়গাতে গো-হারান হারছে ততক্ষণে দেখবেন মোদীর ইস্তফাপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে গেছে তখন আপনি বুঝবেন আপনার একটা ভোটের মূল্য কি!ইতিমধ্যেই দুই দফার ভোটে ৫-এ ৫ হয়ে গেছে এখন লড়াই ৩৭-এ ৩৭ করার”।
অভিষেক আরও বলেন, “মোদী নিজেকে চা ওয়ালা বললেও তাঁকে চা বিক্রি করতে দেখিনি,আজ উনি বলেন উনি চৌকিদার কিন্তু কখনও ওনাকে লাঠি হাতে পাহার দিতে দেখিনি। এমনই চৌকিদার উনি যে, নীরব মোদীরা সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে পালায়। কিন্তু আমাদের নেত্রী আজও টালির ঘরে থেকে মানুষের কথা ভাবেন। এখানেই মিথ্যাবাদী মোদী এবং বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য। ওনার কাছে মানুষের উন্নয়নের জন্যে টাকা নেই কিন্তু নিজের জন্যে আছে তাই দিল্লীতে সেভেন স্টার পার্টি অফিস তৈরী হয়”।
তিনি আরও জানান, “ মোদীর এই দ্বিচারিতা আর চলবে না। এখন জয় শ্রী রামও আর চলছে না। এখন যদি ওরা বলেন জয় শ্রী রাম, মানুষ বলে রান্নার গ্যাসের কেন এত দাম? ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে দাঙ্গা করাই তোদের একমাত্র কাম। আচ্ছে দিনের নামে মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিল, ধংসস্তুপে পরিণত করেছে দেশকে। মোদীর আমলেই বেড়েছে বেকারত্ব, আজকে উনি সেনার নামে, ধর্মের নামে ভোট চাইছে এতটাই নির্লজ্জ উনি! আমি আজ যুবসমাজকে প্রশ্ন করতে চাই যে প্রধানমন্ত্রী দেশের সেনার নামে ভোট চায় তাঁকে কি ভোট দেওয়া উচিত? উত্তরে ‘না’-এর শব্দে কান পাতা দায়। এরপরে তিনি জানান, যে প্রধানমন্ত্রী ধর্মে ধর্মে বিভাজন করে সে আবার মানুষের কাজ করবে কি? উনি তো বিদেশ ভ্রমণেই ব্যস্ত”।
অভিষেক জানান, “ একমাত্র আমাদের নেত্রীই সবসময় সবার পাশে থাকেন। কিন্তু ভোট মিটলে ওদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওরা শুধু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে পারে কিন্তু আমাদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোতে ওরা একটা শুভেচ্ছাও জানায় না। তাই এক ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারত গড়তে আপনারা তৃণমূলের পাশে থাকুন। আমি এটাই বলতে চাই ওরা যেমন সবাইকে নিঃস্ব করেছে আপনরাও ভোটবাক্সে প্রতিবাদ করুন। ওদেরও নিঃস্ব করে দিন”।
বক্তব্যের শেষে বলেন, “এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। তাই আসুন, ভোটবাক্সে জবাব দিন ওদের যাবতীয় মিথ্যে কথার। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।