‘পাঁচ বছরের মধ্যে সাড়ে চার বছর তো বিদেশেই ঘুরে বেড়ালেন প্রধানমন্ত্রী। চৌকিদার মোদী দেশের প্রতিই কৃতজ্ঞ নন’। নির্বাচনী আবহের মধ্যে একটি বেসরকারি বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এভাবেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী-শাসনে দেশের ব্যর্থতা সম্পর্কে ‘দেশের ঘরে ঘরে ওয়াকিবহাল’ বলেও জানান মমতা।
ওই সাক্ষাৎকারে কংগ্রেসকেও ছেড়ে কথা বলেননি মমতা। তিনি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গান্ধী একই পথে চলছেন। দুজনেই তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন। ওঁদের মানুষ জবাব দেবে।’ প্রিয়াঙ্কা সম্পর্কে মমতার কথায়, ‘রাজীব গান্ধীর মেয়ে। তাই ওকে আমি স্নেহ করি। এর বেশি কিছু বলছি না। এমন ভরা ভোটের আবহে নির্বাচনী প্রচার সম্পর্কেও নিজের মতামত জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘প্রচার ক্রমশই নিম্নমানের হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নানারকমের উল্টোপাল্টা কথা বলছেন। আমরা কখনওই নিম্নমানের প্রচার করি না। যাঁরা এই ধরনের প্রচার করেন, তাঁদের সংযত হওয়া উচিত’।
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘মোদী-জেটলির ষড়যন্ত্রে অর্থব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মোদীর আমলে সন্ত্রাসবাদ ২৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। আর মোদীজি খালি ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন’। জিএসটি ও নোটবন্দীর বিরুদ্ধে বরাবরই সরব তিনি। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, ‘কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বলা হয়েছিল, সন্ত্রাসবাদ রুখতে নোটবন্দী। কিন্তু আরও বেড়ে গেছে সন্ত্রাসবাদ। নোটবন্দীর ফলে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা আসেনি। এটা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই নয়। ৫ বছরে মোদি সরকার ব্যর্থ। নোটবন্দী নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিৎ’। ধর্ম নিয়ে বিজেপির রাজনীতির বিরুদ্ধে মমতা বলেন, ‘নিজেদের ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া ওদের নীতি। তৃণমূল ধর্মের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। তাই বাংলায় কোনও হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ নেই। সবাই একসঙ্গে থাকে। উৎসবে অংশ গ্রহণ করে’।
উনিশের ভোটযুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর পরাজয় সম্পর্কে নিশ্চিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘আমি ইউনাইটেড ইন্ডিয়ায় বিশ্বাসী। আমার সবার সঙ্গেই ভালো আলাপ ও যোগাযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে থেকেই একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। সবাই মিলে যাকে নির্বাচিত করবে, তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। আসলে একসঙ্গে মিলে কাজ করাটা মূল। প্রত্যেকটি রাজ্য মিলে সিদ্ধান্ত নেব। এখানে নিজের স্বার্থ নয়, দেশকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘তৃণমূল শুরু করেছিল আঞ্চলিক দল হিসেবে। তবে এখন তৃণমূল জাতীয় দল’।
পুলওয়ামা জঙ্গী-হামলা সম্পর্কে মমতার বক্তব্য, ‘এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কে আগাম সতর্কতার বার্তা থাকা সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না? কেন জওয়ানদের শহিদ হতে হল? প্রচার করা হচ্ছে, মোদী সেনা। আমরা সকলেই জওয়ানদের শ্রদ্ধা করি। তাঁরা আমাদের দেশের সম্পদ। জওয়ানরা সকলের।’ কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএমকে একযোগে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘এরা এখন একসঙ্গে কাজ করছে। সিপিএমের একাংশ বিজেপিকে সমর্থন করছে। কংগ্রেসের দুই প্রার্থী আরএসএস, বিজেপির সাহায্য নিয়ে ভোটে জেতার চেষ্টা করছে। বাংলায় বিজেপি কোনওদিনই ক্ষমতায় আসবে না’।