ছবিটা কোথায় তোলা, কখন তোলা, কেন তোলা, যে মানুষটিকে দেখা যাচ্ছে তার কি নাম এসব প্রশ্নের কোন উত্তর দেওয়া যাবে না। কারণ এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেও নেই।

দেশের নানা প্রান্তে শীত বা গ্রীষ্মে, সকাল-সন্ধ্যায় আপনার আমার সবার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় এই মানুষটার। বদলে যায় শুধু স্থান, কাল। ধরা যাক তার নাম ভারত। সবসময় বিব্রত, সবসময় কুণ্ঠিত, অনেক ইচ্ছে আছে তবুও তা পূরণ না করতে পারা কেমন যেন আবছা হয়ে থাকা একটা মানুষ।
সে ভেবেছিল গণতন্ত্র, স্বাধীনতা তার জীবনে আনবে সুবাতাস। আর কিছু না হোক, যাবতীয় অনিশ্চয়তা কাটিয়ে একটু নিরাপদ হবে তার জীবন।
ভোট আসে ভোট যায় শুধু বদলায় না তার জীবন। তার সেফটি শুধু আটকে থাকে পিনে। সামান্য সেই সেফটিটুকু দিয়েই তিনি তার ধূলোমলিন হাওয়াইটাকে পায়ে গলানোর মত একটা নিরাপদ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
এই নিরাপত্তাটুকু তো আমরা সবাই চাই।
আজ সকালে মানুষটার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে গেল আমার। চোখাচোখি হতেই মুখে একটু হাসি টানার চেষ্টা করে চোখ নামিয়ে নিলেন। একটু অপ্রস্তুত, কারণ প্রতিবারের মত এবারও তার ঐ চটিতে সেফটি আনার করুণ চেষ্টাটা আমি দেখে ফেলেছি। ওকে কে বোঝাবে, আমি তো ওকে সবসময় এই অবস্থাতেই দেখি!
দেখার পর প্রতিবারই ভাবি যেভাবে উনি বাঁচছেন তাতে এরপরে ওর সঙ্গে আমার আর দেখা হবে কিনা তা বলা কঠিন। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি এভাবেই বেঁচে থাকেন। ভোট দেন, খেলাতে ভারত জিতলে আনন্দ করেন, হারলে আমার আপনার মত ওরও দুঃখ হয়, হাজার হোক নামটা তো এক।
কোন নামজাদা মানুষ মারা গেলে, লুকিয়ে একইরকম বিব্রতভাবে চোখের জল মুছে নেন। ভালভাবেই জানেন তিনি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নন, কান্নাকাটি করলে লোকে বলবে আদিখ্যেতা।
সেফটিপিন খুলে মাঝেমধ্যে পায়ে ফুটে যায় পিন। শুধু একটু কঁকিয়ে উঠেই চারপাশ দেখে নেন। কেউ দেখে ফেললো না তো! কড়া পড়া পা থেকে ইদানিং রক্তও বেরোয় না।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তাই উনি শুধু বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন, সেফটি শুধু পায়ের নিচেই আটকে না থেকে একদিন ওর জীবনকে ঘিরে নেবে। সেফটিহীন জীবনের প্রতিটি দিনই হয়ে উঠবে সেফটি।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত