গত ১১ এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। এমনিতেই নোটবন্দী নিয়ে প্রথম থেকে চাপে ছিল বিজেপি। এই ভোট মরশুমে ফের সেই ইস্যু নিয়ে মোদী-শাহদের মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিল কংগ্রেস। নোটবন্দীর জেরে যেখানে সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাঙ্কের দরজায় লাইন দিয়ে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছে, সেখানে কোটি কোটি টাকার নতুন নোট কব্জায় ছিল বিজেপির। গোপন ক্যামেরায় তোলা স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে গতকাল এই অভিযোগ করল কংগ্রেস।
বিজেপির দফতর, পরিচিতের কাছে সুটকেস, টেবিলের ওপর থরে থরে সাজানো নতুন দু’হাজার টাকার নোটের বান্ডিলের ছবি দেখিয়ে নতুন নোট চালানের এক চক্র চলেছে বলেও অভিযোগ করল রাহুল গান্ধীর দল। সেইসঙ্গে দেখান হল গোপন ক্যামেরায় তোলা একের পর এক স্টিং ভিডিও। যেখানে দেখা গেছে, কোটি কোটি টাকার ছবি-সহ আলোচনা চলছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের নাম নিয়ে।
শুধু তাই নয়, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তাতে রয়েছেন ইউনিফর্ম পরা পুলিশ অফিসার। রয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চিফ জেনারেল ম্যানেজার, বিজেপি নেতা। লেনদেনের জায়গা কখনও মহারাষ্ট্রের ডিসিপি অফিস, কখনও বিজেপির দলীয় দপ্তর। কখনও মন্ত্রীর অফিস, কখনও বেসরকারি হোটেল রুম। ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র তথা দলের রাজ্যসভার সাংসদ আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, ‘এরপরেও কি বলতে হবে চৌকিদার সজাগ ছিল?’
সাধারণ মানুষ হাপিত্যেশ করলেও নতুন দু’হাজার টাকার নোট বিজেপির কব্জায় ছিল, এই অভিযোগ সংক্রান্ত স্টিং ভিডিও ফুটেজ এর আগেও দু’দিন দেখিয়েছে কংগ্রেস। প্রতিবারেই প্রকাশ্যে আনা হয়েছে নতুন ক্লিপিংস। কেবল দিল্লীতেই নয়, চলতি লোকসভা নির্বাচনে মোদী-শাহের দলের বিরুদ্ধে এই বিষয়টি নিয়ে আক্রমণ শানাতে দেশব্যাপী সাংবাদিক সম্মেলন করার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হবে বলেও জানিয়ে দেন সিব্বাল।
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেই মোদীর মুখোশ খুলে দেওয়ার জন্য যে স্টিং ভিডিও সামনে এনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলাম, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ৪ লক্ষ ২৩ হাজার লোক দেখেছেন।’ তাই কেবল দিল্লীতে নয়। গুজরাত, মহারাষ্ট্র-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ওইসব স্টিং ভিডিও প্রচারের অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে ঠিক করেছে কংগ্রেস। যদিও বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবে না বলেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে সিবাল বলেন, ‘আদালতে গেলে সময় লাগবে। তাই জনতার আদালতেই বিষয়টি তুলে ধরা হবে।’
এআইসিসির সদর দফতরে স্টিং অপারেশনের ভিডিওগুলি দেখিয়ে সিব্বালের প্রশ্ন, ‘এসব যখন হচ্ছিল, তখন চৌকিদার কি ঘুমোচ্ছিলেন? কেন ইডি, সিবিআই, আয়করের মতো সরকারের এজেন্সি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কেন এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি?’ মোদীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সন্ত্রাসবাদ, কালো টাকা রুখতেই নোটবন্দি। কিন্তু স্টিং ভিডিও দেখে তো মালুম হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ ভোট জেতাই ছিল আসল উদ্দেশ্য।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে নোটবন্দির পরের বছরই ছিল উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন।
প্রসঙ্গক্রমে কমলনাথ থেকে কানিমোঝি, বিরোধী রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বাড়ি, অফিসে সাম্প্রতিক আয়কর হানার বিষয়টি উল্লেখ করে সিব্বাল বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের কাছে কিছু না থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে সরকারি এজেন্সি। আর বিজেপির কাছে কোটি কোটি কালো টাকা আছে জেনেও কেন আজ পর্যন্ত কোথাও কোনও তল্লাশি নেই?’