প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানোয় উড়িষ্যায় সাসপেন্ড হলেন এক পর্যবেক্ষক। তাঁকে সাসপেন্ড করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে উড়িষ্যার সম্বলপুরে।
নির্বাচনী প্রচারে মঙ্গলবার উড়িষ্যার সম্বলপুরে গিয়েছিলেন মোদী। সেখানে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯৬ ব্যাচের কর্ণাটক ক্যাডারের আইএএস অফিসার মহম্মদ মহসিন। তাঁর নির্দেশেই মোদীর কপ্টারে তল্লাশি চালান হয়। যার জেরে মোদীর রওনা হতে ১৫ মিনিট দেরিও হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি সংক্রান্ত নির্দেশিকা লঙ্ঘন করায়, তাঁকে সাসপেন্ড করা হল বলে কমিশন সূত্রে খবর।
অভিযোগ, ওড়িশার সম্বলপুরে হেলিকপ্টারে আচমকা তল্লাশির কারণে প্রায় ১৫ মিনিট আটকে থাকতে হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তবে মঙ্গলবার শুধু প্রধানমন্ত্রীই নয়, রউরকেল্লায় উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক এবং কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর কপ্টারেও একইভাবে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি কমিশন। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে উঠছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, মহসিনকে সাসপেন্ড করার নির্দেশে কমিশন বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) এবং এই বাহিনীর নিরাপত্তা পাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের যে নির্দেশ রয়েছে, সেই অনুযায়ী কাজ করেননি মহসিন। সেই কারণেই সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁকে। কমিশনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, এসপিজি নিরাপত্তা যাঁরা পান, তাঁদের এই ধরনের তল্লাশি থেকে রক্ষাকবচ রয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে এসপিজিকে তল্লাশির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত জানায়নি কমিশন।
উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগেই কর্ণাটকের চিত্রদুর্গে মোদীর সভায় তাঁর হেলিকপ্টার থেকে নামানো একটি কালো বাক্স ঘিরে বিতর্ক বাধে। কংগ্রেসের প্রশ্ন তুলেছে কী ছিল ওই বাক্সে? তাদের দাবি, বাক্সে কী ছিল, তদন্ত করে জানাক নির্বাচন কমিশন। একদিকে যখন মোদীর কপ্টারে তল্লাশি চালিয়ে সাসপেন্ড হচ্ছেন অফিসার, তখন নবীন পট্টনায়ক আর এইচ ডি কুমারস্বামীর কপ্টারেও একই ধরনের তল্লাশি চলেছে। কিন্তু তা নিয়ে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই কমিশনের।
একটি ওড়িয়া টিভি চ্যানেলে দেখা যায়, ধীর-স্থির হয়ে নিজের হেলিকপ্টারে বসে রয়েছেন নবীন। বিজেডি নেতা তখন সদ্য নেমেছেন রউরকেল্লার হেলিপ্যাডে। মুখ্যমন্ত্রীর ব্রিফকেস খুলে অফিসারেরা উল্টেপাল্টে দেখছিলেন ভাঁজ করা পাজামা-পাঞ্জাবি, তোয়ালে। কপ্টারের আইসবক্স খুলেও নেড়েচেড়ে দেখেন এক অফিসার। একটি কথাও বলেননি নবীন।
কমিশন সূত্রের বক্তব্য, নেতারা ভোটারদের প্রভাবিত করতে প্রচারে নগদ টাকা বা কোনও উপঢৌকন নিয়ে যাচ্ছেন কি না, চাইলে সেটাই তল্লাশি করে দেখা হতে পারে। নবীনের কপ্টার থেকে ‘আপত্তিকর’ কিছু মেলেনি। তবে বিজেপির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কপ্টারে কমিশনের কর্তারা যখন তল্লাশি চালাতে গিয়েছেন, তখন প্রবল চেঁচামেচি করেছেন তিনি। ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিও।
সম্বলপুরে তাঁর হেলিকপ্টার নামতেই পুলিশ নিয়ে তল্লাশি করতে এগিয়ে যান কমিশনের এক আধিকারিক। দেখা যায়, তাতে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে হাততালি দিয়ে চিৎকার করছেন ধর্মেন্দ্র। কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসার তাঁকে ওই কর্তার পরিচয়পত্র দেখান। তাতেও শান্ত করা যায়নি তেলমন্ত্রীকে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপির কোনও মন্ত্রী হলেই তল্লাশিতে ছাড় মিলছে, শুধু বিরোধীদের ক্ষেত্রেই যত তল্লাশির বহর।