গত ১০ মার্চ লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ওইদিন থেকেই লাগু হয়ে গেছে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি। কিন্তু দেখা গেছে, ভোট ঘোষণার পর থেকেই পুরোদমে অসৌজন্যতার রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। যার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতেই দেখা যায়নি কমিশনকে। শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার পরে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য ও নির্বাচনী বিধিভঙ্গের কারণে বিজেপির নেতামন্ত্রীদের শাস্তি দিয়েছে কমিশন। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে একাধিক বার এমন কিছু কাজ করেছেন যা বিধিভঙ্গের সামিল, সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আজও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তারা। যার ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রী বাদ কেন? এমন পক্ষপাতিত্বেরই বা কারণ কী? যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে দিন কয়েক আগেই পুলওয়ামা-বালাকোটের উদাহরণ দেখিয়ে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কমিশন অবশ্য এ সাফাই গেয়েছে যে, বিষয়টি বিশেষ কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট এলেই প্রধানমন্ত্রীকে নোটিস পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের লাতুরে একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী প্রথম বার ভোট দিতে যাওয়া ভোটারদের পাকিস্তানের বালাকোটে হামলা করা সেনাদের কথা ভেবে ভোট দিতে বলেন। পুলওয়ামায় নিহত আধাসেনাদের স্মৃতিতেও ভোট উৎসর্গ করার ডাক দেন মোদী। তিনি কোনও দলের নাম নেননি ঠিকই, কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, মোদী বিজেপির হয়েই ভোট চাইতে গিয়েছিলেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোদী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। রিপোর্ট দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে আসার পরেই তা সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি সংবেদনশীল। তাছাড়া, খোদ প্রধানমন্ত্রী জড়িত রয়েছেন। তাই সব দিক খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্রের খবর, আপাতত দু’টি বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী বালাকোটের প্রসঙ্গ তুলে আদৌ নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছেন কি না। দ্বিতীয়ত, তাঁর মন্তব্যকে একটি দল বা এক জন নেতার হয়ে প্রচার বলা যায় কি না। এ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মতবিরোধ থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন। একটি সূত্রের মতে, যদি দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী বিধিভঙ্গ করেছেন, তা হলে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হবে। যদিও কমিশন শেষ পর্যন্ত তেমন ‘সাহসী’ পদক্ষেপ করতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দিহান কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র পবন খেড়ার কথায়, ‘ওই মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কী সাজা হতে পারে, তা নিয়ে দেশবাসীকে অন্ধকারে রেখেছে কমিশন। তাদের উচিত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।’