লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই গোটা দেশ জুড়ে বইতে শুরু করেছিল বিজেপি বিরোধী হাওয়া। যার আঁচ পড়েছিল গোবলয়ের যোগী রাজ্যেও। যার ফলে দেখা যাচ্ছে, গত ১১ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশে হওয়া লোকসভা ভোটের প্রথম দফার মতো দ্বিতীয় দফার ভোটেও লাভ-ক্ষতির হিসেবে পিছিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। এদিন বৃহস্পতিবার সে রাজ্যের ৮ট আসনে ভোট। গতবার সবগুলোই গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। কিন্তু এবার তার মধ্যে কমপক্ষে ৩টি আসন ছিনিয়ে নিতে পারে বিরোধীরা। ২টি মহাজোট। একটি কংগ্রেস। এছাড়াও আরও একটি আসনেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
প্রসঙ্গত, প্রথম দফার ৮টি কেন্দ্রে যে বড়সড় ক্ষতি হবে বিজেপির, তা আগেই টের পেয়েছেন মোদী-শাহেরা। জানা গেছে, ফল হতে পারে ৬-২। গতবার যদিও সবকটিতেই জিতেছিল বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে আখ, গম, কর্মসংস্থান, জীবন–যাপনের সুবিধার হিসেব নিয়ে তুমুল নির্বাচনী প্রচার শেষমেশ এসে থামে সেই জাতপাতের অঙ্কে। উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের সোজা হিসেব এখানে খাটে না। ব্রাহ্মণ, বানিয়া, ঠাকুর, জাঠ, ক্ষত্রিয়, পিছড়ে বর্গ, দলিত ইত্যাদির নানা অঙ্ক। দলিত আবার বিভক্ত জাটব, বাল্মীকি, কোরি, ধোবি, খটিকে। প্রতিটি দলের ভোটব্যাঙ্ক নির্দিষ্ট জাতি ও সম্প্রদায় ভিত্তিক। ভোটের মুখে সমীক্ষা বলতে ভোটারের মুখের কথা। সেই হিসেবেই প্রথম দফায় পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি।
তবে গেরুয়া শিবির স্বস্তিতে নেই আজকের দ্বিতীয় দফার ভোট নিয়েও। আগ্রা, ফতেপুর সিক্রি, মথুরা, নাগিনা, আমরোহা, হাথরস, বুলন্দশহর ও আলিগড়ে ভোট আজ। বিজেপি ও মহাজোটের ‘মহাযুদ্ধ’ হচ্ছে আগ্রায়। কে জিতবে আন্দাজ করা কঠিন। বিজেপি হারাতে পারে ফতেপুর সিক্রি, নাগিনা ও আমরোহা আসনগুলি। মহাজোটের দখলে যেতে পারে নাগিনা ও আমরোহা। কংগ্রেস পেতে পারে ফতেপুর সিক্রি। হাথরস, মথুরা, বুলন্দশহর ও আলিগড়ে কী হবে তা-ও বলা যাচ্ছেনা। উল্লেখ্য, মথুরা ছাড়া বাকি ৩টি আসনেই এবার প্রার্থী বদল করেছে বিজেপি। মথুরায় হেমা মালিনীকে অবশ্য ভোট দেবেন না বাঙালি বিধবারা। কয়েক বছর আগে মথুরায় ভিখারিদের কটাক্ষ করে বাঙালি বিধবাদের বাড়বাড়ন্তকে দায়ী করেছিলেন বলিউডের ‘স্বপ্নসুন্দরী’ হেমা। সেই উষ্মা আজও পুষে রেখেছেন বেশিরভাগ বাঙালি বিধবাই।
বৃন্দাবনের ‘মৈত্রী ঘর বিধবা আশ্রম’–এ থাকেন বাটানগর, গুমা, বাগুইআটি, কোন্নগর থেকে আসা জনা দশেক বৃদ্ধা। সন্তান-সন্ততিদের ছেড়ে ওঁরা কেউ ১৫ বছর, কেউ বা ৭ বছর মথুরা-বৃন্দাবনের বাসিন্দা। ভোটার তালিকায় সবার নাম ওঠেনি। সবাই ভিক্ষুক নন। বাংলার রাজনীতিতে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনেন ওঁরা। অনেকে আবার ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের খুঁটিনাটি জানেন। আক্ষেপ করেন, ‘যদি আমাদের সময় এ সব থাকত।’ জানান, যতটা না পেটের টানে তার চেয়ে বেশি ধর্মের টানে বিদেশ বিভুঁইয়ে পড়ে থাকেন। হেমা মালিনীর প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁরা বলছেন, ‘উনি সিনেমার নায়িকা। ওঁর তো জানা উচিত যে, যুগ যুগ ধরে বাঙালি বিধবারা এখানে আসেন। সংখ্যাটা হঠাৎ বেড়ে যায়নি। বরং কয়েক দশকে অনেক কমেছে। হেমার বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য আমাদের মতো অসহায়দের অসুবিধায় ফেলেছে।’
আগ্রায় ত্রিমুখী লড়াইয়ে বিজেপির হয়ে রাজ্যের মন্ত্রী এসপি সিং বাঘেল, বসপার মনোজ সোনি, আর কংগ্রেসের হয়ে প্রাক্তন আয়কর কমিশনার প্রীতা হরিত। বিজেপিতে যদিও এখন তুমুল অন্তর্কলহ। মোদী মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত স্থানীয় সাংসদ রামশঙ্কর কাটারিয়াকে এটাওয়া কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়ায় তাঁর অনুগামীরা এবার দলের প্রতি বেজায় ক্ষুব্ধ। কাটারিয়া দুবার জিতেছেন এখানে। তাঁর অনুগামী মোটেই কম নয়। এমনিতে ‘দলিত ভূমি’ হিসেবে পরিচিত আগ্রা। অতীতে বসপা প্রার্থী কুঁয়র চাঁদ বকিল ১০ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন কাটারিয়াকে। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও আগ্রায় নিজের ভোটব্যাঙ্কের জানান দিতে সক্ষম হয়েছিলেন বহেনজি। সেবার ৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬টিই ছিল বসপার দখলে। এবার তাই সবমিলিয়ে সপা-বসপা-রালোদ-এর পাল্লাই ভারী।