নিজের দলের কাছে পাত্তা পাচ্ছেন না ভারতী ঘোষ। কর্মী-সমর্থকদের কাছে তিনি এখন ‘বিপজ্জনক প্রার্থী’। কেউই পছন্দ করছেন না তাঁকে। তাঁর প্রচার এড়িয়ে যাচ্ছেন সকলে। তিনি প্রচারে বেরোলে কর্মীরা তো বটেই এমনকি সাধারণ মানুষও তাঁকে কটাক্ষ করেন, দেখতে হয় কালো পতাকা। নিয়ম ভাঙায় নির্বাচন কমিশনের শোকজের মুখে পড়তে হয় তাঁকে, পদে পদে হেনস্তার মুখে পড়লেও সর্বভারতীয় দলের প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও জন্য দলের পক্ষ থেকে অবরোধ, ঘেরাও, বিক্ষোভ হয় না। কেউ গলা ফাটান না। ভোটযুদ্ধে ভারতী কার্যত অসহায়, একলা।
সদ্য দলে এসেই যে তিনি প্রার্থী হয়েছেন তা মানতে পারেনি বিজেপির বহু দিনের কর্মীরাই। তাই নিয়েও যথেষ্ট ক্ষোভ দলের অন্দরে। মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ভারতীকে প্রার্থী করায় তা মানতে পারেননি ঘাটালের বিজেপি–র নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য, বিজেপি নেতা রতন দত্ত। সিপিএম থেকে আসা অন্তরা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন। সবং বিধানসভার উপনির্বাচনে তিনি বিজেপি–র প্রার্থী হয়েছিলেন। রতনবাবুর সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে। একে কাজে লাগান মুকুল রায় গোষ্ঠী। ভাবেন, ভারতী ঘোষের মতো কেউ প্রার্থী হলে সকলে এক হয়ে কাজ করবেন। দলের লোকজন বলছেন, এতে হিতে বিপরীত হয়েছে।
প্রার্থী নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনা এলাকায় যার সব থেকে বেশি সংগঠন রয়েছে, সেই রতনবাবুকেই ভারতীর কোনও প্রচারে দেখা যায়নি। রতনবাবু জানান, তাঁকে প্রচারের কোনও কর্মসূচি জানানো হচ্ছে না। তাই থাকতে পারছেন না। তাঁর সঙ্গে প্রচারে গেলেই বিপদে পড়ার আশঙ্কায় ভারতীর সভা, মিছিল এড়িয়ে চলছেন স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। তাঁদের কাছে তিনি ‘বিপজ্জনক’ প্রার্থী। ভোটের আগেই মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তাঁর দিক থেকে।
সম্প্রতি ঘাটালে তাঁর গাড়িতে ভাঙচুর করে নির্বাচনী এজেন্টকে মারধর করা হয়। ঘাটাল, দাসপুরে বিজেপি–র যুব মোর্চার কর্মীরা একগুচ্ছ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার দিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকার সময় গাড়ির চালকদের মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছেন, এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার মাইশোরায় এলাকার মানুষজন কালো পতাকা দেখিয়ে ভারতী ঘোষকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন। বিজেপি–র রাজ্য সভাপতি থেকে দলের কোনও প্রার্থীর গাড়িতে ঢিল পড়লে যেখানে পথ অবরোধ–বিক্ষোভ হয়, ঘাটালের প্রার্থীর ক্ষেত্রে সে–সব কিছুই হয়নি। সূত্রের খবর এই সব কিছুই করছেন বিজেপির কর্মীরাই।
একদিকে যেমন আছে দলের মধ্যেই তাঁকে নিয়ে বিক্ষোভ তার সঙ্গেই আছে মানুষের বিমুখ আচরণ। প্রচারে কার্যত কোনও সাড়াই পাচ্ছেন না তিনি। সব মিলিয়ে বেজায় জটিল অবস্থা ভারতীর। যেন ভোটের আগেই হেরে আছেন ভারতী।