নির্বাচনী হলফনামায় নিজের সম্পতি গোপন করছেন চৌকিদার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন প্রাক্তন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সাকেত গোখলে। সেইসঙ্গে মোদীর যাবতীয় সম্পত্তির হিসেব জানতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনেরও আবেদন জানিয়ে ছিলেন তিনি। আর এবার গুজরাটের গান্ধীনগরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল কংগ্রেস৷
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার দাবি, গান্ধীনগরে নিজের জমি নিয়ে হলফনামায় দু’ধরনের তথ্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ২০০৭ সালে তিনি হলফনামায় বলেছিলেন, গান্ধীনগরে এক নম্বর সেক্টরে ৪১১ নম্বর প্লটের সম্পূর্ণ মালিকানা তাঁর৷ এই প্লটে জমির পরিমাণ হল ৩২৬.২২ বর্গ মিটার৷ তিনি এক লাখ তিরিশ হাজার টাকা দিয়ে জমিটি কিনেছিলেন৷ ২০০৭-এ তার বাজারদর ছিল এক কোটি আঠারো লাখ টাকা৷
কিন্তু এরপর ২০১২ সালের হলফনামায় মোদী আর ৪১১ নম্বর প্লটের কোনও উল্লেখ করেননি৷ বরং, একটি নতুন প্লটের উল্লেখ করেন, যার নম্বর ৪০১/এ৷ তিনি দাবি করেন, ওই জমির এক-চতুর্থাংশ মালিকানা তাঁর৷ এখানেও জমির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৩২৬.১১ বর্গ মিটার৷ এর পর ২০১৪-র বিধানসভা নির্বাচনের হলফনামায় এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পিএমও-র ওয়েবসাইটে একই কথা জানিয়েছেন তিনি৷
গোলমালটা এখানেই। খেরার দাবি, গুজরাটের রাজস্ব বিভাগে যে জমির রেকর্ড আছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৪১১ নম্বর প্লটটি নরেন্দ্র মোদীর নামে৷ কিন্তু ৪০১/এ প্লটের কোনও বিবরণ রেকর্ডে নেই৷ আবার এই ‘অস্তিত্বহীন’ প্লটটির এক-চতুর্থাংশের মালিকানা দাবি করেছেন আরও এক বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও!
২০১৪ সালের হলফনামাতেই জেটলি জানিয়েছিলেন, তিনি ৪০১/এ প্লটের এক-চতুর্থাংশের মালিক৷ গান্ধীনগরের মামলাতদার (যিনি জমি সংক্রান্ত তথ্য রাখেন) তাঁকে ওই প্লটটি দিয়েছেন৷ খেরার দবি, জমির রেকর্ড বলছে, ৪০১ নম্বর প্লটটি পুরোটাই অরুণ জেটলির নামে এবং ৪১১ নম্বর প্লটটি মোদীর নামে৷ ৪০১/এ প্লটটির কোনও বিবরণ রেকর্ডে নেই৷
পবন জানিয়েছেন, ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টে গান্ধীনগরে প্লট বিলি সংক্রান্ত একটি মামলায় গুজরাট সরকারের হয়ে আইনজীবী ও বর্তমানে সাংসদ মীনাক্ষী লেখি জানিয়েছিলেন, ২০০০ সালের পর থেকে কোনও সাংসদ বা বিধায়ককে গান্ধীনগরে কোনও প্লট দেওয়া হয়নি৷ মোদী মুখ্যমন্ত্রী হন ২০০১ সালে এবং বিধায়ক হন ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে৷ প্রশ্ন, তা হলে মোদী কী করে গান্ধীনগরের প্লটটি পেলেন? ৪১১ ও ৪০১/এ প্লটের রহস্যই বা কী?
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ২৫ শে অক্টোবর গুজরাত সরকারের জমি বন্টন স্কিমে মোদী গান্ধীনগর সেক্টর ওয়ানে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে জমিটি কিনেছিলেন। ২০০৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় এই ৪১১ নম্বর প্লটটির কথা তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০০ সালে গুজরাত সরকারের এই জমি বন্টন প্রকল্প নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে গুজরাত হাইকোর্ট।
২০১২ সালে ২ রা নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে, আপাতত এই জমি বন্টন স্কিমের মাধ্যমে কোনও জমি বন্টন হবে না এবং হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া ইতিমধ্যেই যাঁরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে জমি পেয়েছেন, তাঁরা সেই জমি হস্তান্তরও করতে পারবেন না। কিন্তু ওই মামলার শুনানি থেকে বিভিন্ন সময় বিচারপতিরা নিজেদের সরিয়ে নেওয়ায়, ২০১৭ সালের ২৮ শে আগস্ট গুজরাত হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এই মামলা। তবে এরপরও ওই সংশ্লিষ্ট মামলার বিশেষ অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে।