সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ থেকে সিপিএমের হয়ে ভোটে লড়ছেন মহম্মদ সেলিম। কমিশনকে সেলিমের দেওয়া হলফনামা থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর হাতে নগদ আছে ২, ৫০০ টাকা। ব্যাঙ্কে ৩৫,৬৩১ টাকা। শেয়ার, মিউচুয়াল ফাণ্ড ইত্যাদিতে থাকা টাকার পরিমাণ ৩৮ লক্ষ ৯ হাজার ৮৫০। এবং পোস্ট অফিসে আছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৭ টাকা। অর্থাৎ মোট টাকার পরিমাণ ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৮ টাকা। অর্থাৎ ‘সর্বহারা’ সেলিমের নিজের নামে গচ্ছিত আমানত মাত্র ৪০ লক্ষ টাকা।
পেটোয়া, ধামাধারীদের দিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে যে সেলিম সাহেব প্রকৃত সর্বহারার প্রতিনিধি। নিজের নামে কিচ্ছুটি নেই। হাতে আছে মাত্র কয়েক হাজার টাকা। এই প্রচার চালানোর মূল উদ্দেশ্য আসল সত্যকে গোপন করা। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। এটাই বাস্তব যে গত পাঁচ বছরে ‘সর্বহারা’ সেলিমের নিজেরই সম্পত্তি বৃদ্ধির পরিমাণ ২০ শতাংশ। তারপর তো স্ত্রীর নামে সল্টলেক-শিলিগুড়ির জোড়া ফ্ল্যাট, জোড়া গাড়ি, বিপুল আমানত আছেই।
২০১৪ তে সেলিমের শিকে ছিঁড়েছিল ২৯ শতাংশ ভোট পেয়েও। বারোশোর কিছু বেশী ভোটের ব্যবধান সংসদে যান সেলিম।
২০১৪-র মে মাস থেকে ২০১৮-র ৩১ মার্চ অবধি সাংসদরা বেতন ও ভাতা হিসাবে পেতেন১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা। সাথে প্রতি সংসদীয় কমিটির বৈঠক পিছু গড়ে ২৫ হাজার টাকা। সেলিম সাহেব বেশ অনেকগুলি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং বৈঠকে প্রায় কামাইই করতেন না। কারণ বৈঠকে গেলেই ২৫ হাজার টাকা।
সংসদ সূত্রে জানা গেছে, সেলিম সাহেব বিদেশ মন্ত্রকের স্থায়ী সমিতি, সড়ক পরিবহন এবং জাহাজ মন্ত্রকের উপদেষ্টামূলক কমিটি, এস্টিমেট কমিটি ছাড়াও আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন সেলিম সাহবে। স্বাভাবিকভাবেই মিটিং ও রোজগার ভালোই হত।
বেতন ও ভাতার একটি অংশ সিপিএম নিয়ে নিলেও সংসদীয় কমিটির বৈঠকের টাকা সিপিএম নিত না। সংসদীয় কমিটির বৈঠকের টাকা, বেতন ভাতা বাবদ টাকা মিলিয়ে তো কোটির ওপরে জমা হয়েছিল সেলিমের অ্যাকাউন্টে। প্রশ্ন হল তাহলে, সে টাকা কি ভোটের আগে তুলে নেওয়া হল? যাতে সেলিম সাহেবকে ‘সর্বহারা’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সুবিধা হয়। সেলিম সাহেব কি এই টাকা পার্টিকে দিয়েছেন?
পার্টি সূত্রে খবর, উনি সংসদীয় কমিটি খাতে প্রাপ্ত কোনও টাকাই পার্টিতে দেননি। অনেকে বলছেন এবার সাংসদ থাকাকালীনই দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। জাঁকজমক কেমন ছিল তা উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের নিমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা ভালোই জানেন। ‘নিন্দুকে’রা বলছেন, ওই অনুষ্ঠানে সেলিম সাহেব জলের মতো টাকা খরচ করেছেন।
২০১৮-র ১ এপ্রিল থেকে বেতন সংশোধিত হয়। সাংসদরা ১ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা করে পান। একটা অংশ সিপিআইএম কেটে নিলেও সেলিম সাহেব সেই টাকার একটা ভালো অংশ পেয়েছেন। অঙ্ক সত্যিই কঠিন। সব মিলিয়ে হিসাব কিছুতেই মিলছে না। আসলে অ্যাকাউন্টে আসা টাকা অন্যত্র চালান হয়েছে। পার্টি ফান্ডে নয়। ব্যবহৃত হয়েছে সেলিম সাহেবের স্বার্থেই।
এর সঙ্গে আছে সল্টলেক ও শিলিগুড়িতে জোড়া ফ্ল্যাট। যার দাম সাকুল্যে ২১ লাখ টাকা। সল্টলেকের মতো জায়গায় একটা দুকামরার ফ্ল্যাটের দামই কোটি টাকার কাছাকাছি। সেখানে কোন জাদুমন্ত্রে ৯.৭০ লাখ টাকায় ১, ২১৯ স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাট সেলিমের পরিবার পেলেন, তা তিনিই ভালো জানেন। এর সঙ্গে আছে ‘১২ লাখ টাকার’ জলের দরের শিলিগুড়ির ফ্ল্যাট। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে সেলিমের এমন ‘বাজি মারা’ কৃতিত্বের কথা। এমন সস্তায় ‘চমকপ্রদ’ পুষ্টিকর ফ্ল্যাটের হদিশ পেতে আক্ষরিক অর্থেই হামলে পড়েছেন ক্রেতারা। বাড়ি-ফ্ল্যাটের দালালরাও এখন গরুখোঁজা খুঁজছেন সেলিমকে।
তালিকা এখানেই শেষ নয়। খিদিরপুরের যে ফ্ল্যাটে সেলিম থাকেন, সেটা তাহলে কার নামে? হলফনামায় সেলিম লিখেছেন, তাঁর কোনও গাড়ি নেই। রায়গঞ্জে সেলিম যে দুধ সাদা স্করপিও গাড়িটি চড়েন সেটা কার? ফ্ল্যাট কার নামে? ভাড়া থাকেন না নিজস্ব ফ্ল্যাট? বাম জামানায় চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতালের ওপরটা জবরদখল করে সপরিবারে থাকতেন সেলিম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে আসার পর সেটা দখলমুক্ত করেন।
সিপিএমের অভ্যন্তরেই এখন চর্চা শুরু হয়েছে যে ‘সর্বহারা’ সাজতে হলফনামা দেওয়ার আগে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে ফেলেছেন সেলিম সাহেব। যদিও ‘সর্বহারা’ সেলিমের নামে ব্যাঙ্কে আছে মাত্র ৪০ লক্ষ টাকা।