জনসভা হোক বা কর্মীসভা কিংবা প্রশাসনিক বৈঠক সব জায়গাতেই দেখেছি কোনকিছুই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর এড়িয়ে যায়না। এদিন আবার তার প্রমাণ পেলাম। উত্তর দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে দিদির মিটিং শেষ হয়েছে, তিনি হেলিকপ্টারে বসে পড়েছেন, সচল হয়ে উঠেছে কপ্টারের ওপরের পাখা, নিচে মুখ্যমন্ত্রীর পিএসও কুসুম দ্বিবেদী, আমি ও অন্যান্য অফিসাররা দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দ্বিবেদীর ওয়াকিটকিতে ফোন এল, হেলিপ্যাডের ব্যারিকেডের ধারে একজন পুলিশকর্মী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে গেছেন, সেখানে যেতে হবে।
নির্দেশ পাওয়া মাত্র আমরা ছুটলাম সেখানে। গিয়ে দেখি অসুস্থ পুলিশকর্মী হিলি থানার এস আই বিনয় কুমার মণ্ডলকে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি জানালেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীকেই দেখছিলাম, হঠাৎ পড়ে গেলাম। অনেকক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে করতেই হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।
ঘটনা হল, আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়া এস আই যেমন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখছিলেন ঠিক তেমনিই মুখ্যমন্ত্রীও হেলিকপ্টারে বসেই লক্ষ্য করেছেন পুলিশকর্মীটির পড়ে যাওয়ার ঘটনা। দেখামাত্র পিএসও স্বরূপ বিশ্বাসকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী স্বরূপ হেলিকপ্টারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিবেদীকে তৎক্ষণাৎ অসুস্থ পুলিশকর্মীটির কাছে যেতে বলেন।
বছরদুয়েক আগে বহরমপুরের একটা মাঠে জনসভাতে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে এসে প্রখর রোদে অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন এক বৃদ্ধা। সে ঘটনাও দিদির চোখ এড়ায়নি। দেখামাত্র তিনি পুলিশকে তাকে সুস্থ করে তোলার নির্দেশ দেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাকে খাইয়েদাইয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আমার মনে আছে মুখ্যমন্ত্রী তাকে একটা শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন।
বড় ঘটনার সামনে অনেকেই বীর হয়ে যান কিন্তু ছোট ঘটনায় ধরা পড়ে কোন মানুষের চরিত্রের আসল দিকটি। তাকে নতুন করে চেনা যায়। এই দুটি ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর চারপাশে তীক্ষ্ণ নজর রাখার অভ্যাস ও মানবিক মুখচ্ছবিটিকে সামনে আনলো।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত