দেশে সপ্তদশ লোকসভা ভোট শুরু হতেই বিরোধী থেকে শুরু করে ভোটার, সকলকেই হুমকি দেওয়া শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দিয়ে বিরোধীদের চমকে ধমকে চুপ করানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছিল মোদী-শাহেরা। আর ভোট ঘোষণার পর দেখা গেল হুমকি দিয়ে ভোটারদেরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। মানেকা গান্ধীর পর এবার অভিযুক্ত গুজরাতের বিজেপি বিধায়ক রমেশ কাটারা। নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে জনতার উদ্দেশে গুজরাতের এই বিজেপি নেতার হুঁশিয়ারি, ‘মোদী সব জায়গায় ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছেন, বিজেপিকে ভোট না দিয়ে কংগ্রেসকে ভোট দিলেই আমরা জানতে পারব।’ মঙ্গলবারই তাঁকে ক্যামেরার সামনে এই মন্তব্য করতে দেখা যায়। ঘটনা সামনে আসার পরই প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধীরা। অভিযোগ জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনেও।
মঙ্গলবার গুজরাতের দাহোদ লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন এই বেফাঁস মন্তব্য করেন ফতেপুরার বিজেপি বিধায়ক রমেশ কাটারা। সংবাদ সংস্থার ক্যামেরার সামনেই উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢোকার পর ইভিএমে যশবন্ত সিংহ ভাভোরের ছবি এবং পদ্মফুল প্রতীক দেখতে পাবেন। ওখানেই বোতাম টিপে ভোট দেবেন। কোনও ভুল যেন না হয়। কারণ এ বার মোদী স্যর সর্বত্র ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছেন।’ শুধু তাই নয়। কারও যাতে বুঝতে অসুবিধে না হয়, সেই জন্য রমেশ ফের বলেন, ‘কে বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে, আর কে কংগ্রেসকে, সব দেখতে পাবো আমরা। আধার কার্ড সহ সব কিছুতেই আপনাদের ছবি আছে। কোনও বুথ থেকে কম ভোট এলেই মোদী স্যর জানতে পারবেন, কারা তাঁকে ভোট দেননি। তা হলে আর সে কোনও কাজ বা চাকরি পাবে না।’
এই মুহূর্তে দাহোদ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ যশবন্ত সিংহ ভাভোর। তাঁর সমর্থনে খোদ বিজেপি বিধায়কের এই খোলা এবং ভুয়ো হুঁশিয়ারিতে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তরফে লালুপ্রসাদ টুইট করেছেন, ‘অসহায় ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বিজেপিতে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভোটে এই ধরনের হুমকির প্রভাব পড়বে।’ যদিও এই প্রথম নয়, এর আগেও ভোটারদের ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করার ঘটনা ঘটেছে। উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরে বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই মন্তব্য করেন যে মুসলিম ভোট ছাড়াই তিনি জিতবেন। এবং তাঁদের কোনও সুবিধাই দেবেন না তিনি।
অন্য আরেকটি ঘটনায় উত্তরপ্রদেশেরই পিলিভিটে বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন মানেকা। হুমকি দিয়েছিলেন মুসলিম ভোটারদের। নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, মুসলিমরা তাঁকে ভোট না দিলে, তিনিও তাঁদের চাকরি বা অন্য কোনও সুবিধা দেবেন না। নিজের ছেলে বরুণ গান্ধীর নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘যে গ্রাম থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পাবো, তা গ্রেড এ পর্যায়ে ফেলা হবে। ৬০ শতাংশ পেলে গ্রেড বি, ৫০ শতাংশ পেলে গ্রেড সি আর তার কম হলে সেই গ্রামকে ফেলা হবে গ্রেড ডি পর্যায়ে।’ যে গ্রাম থেকে যে রকম ভোট আসবে, তার ভিত্তিতেই উন্নয়নের কাজ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এমন মন্তব্যে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হওয়ায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য কোনও ধরনের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না তিনি, এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। আর এবার রমেশ যে মন্তব্য করলেন তাতেও বিধিভঙ্গ হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন বিরোধীরা।