এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ড আর তাতে পুড়ে ছাই ৮৫০ বছরের ইতিহাস। প্যারিসের নোত্র দাম, মধ্যযুগীয় এই স্থাপত্যে আগুন লাগে সোমবার বিকেলে। তবে গির্জার একাংশ ভস্মীভূত হলেও মূল কাঠামো বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেই আগুন। প্রায় আট ঘণ্টার চেষ্টায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোর ৩টে নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও তত ক্ষণে আগুনের গ্রাসে ভেঙে পড়ে গির্জার একাংশ। এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে এখনও কিছু জানা যায়নি। প্রায় ৬০ লক্ষ ইউরো খরচ করে এই ক্যাথিড্রালের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। সেখান থেকে আগুন লাগতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। গোটা ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত হবে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে।
মধ্য প্যারিসের এই এলাকাটি সব সময়ে স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকে থিকথিক করে। এলাকাটি যতটা সম্ভব খালি করে দিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগুন নেভানোর কাজে নেমেছিলেন দমকলকর্মীরা। বেশ কিছু ক্ষণ আগুন জ্বলার পরে ভাঙতে শুরু করে প্রাচীন স্থাপত্যের অংশবিশেষ। ভেঙে পড়েছে ক্যাথিড্রালের ধাতব মিনারের চূড়ার পুরো উপরের অংশটি। প্যারিসের মেয়র আন হিদালগো টুইটারে আর্জি জানিয়েছেন, গির্জার কাছাকাছি যাওয়ার কোনও রকম চেষ্টা না-করতে। রাত দশটা পর্যন্ত আগুন আয়ত্তে আসেনি। দমকল প্রধান জঁ ক্লদ গালে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এর পর গির্জার বিশাল ঘণ্টাগুলি ভেঙে পড়তে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য, আগুন যাতে আর ছড়িয়ে না পড়ে, সেটা দেখা। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে আগুন গির্জার উত্তর অংশে ছড়িয়ে না পড়ে।’’
প্যারিস পুলিশ জানিয়েছে, আগুন নেভাতে গিয়ে এক দমকল কর্মী গুরুতর আহত হন। দমকলকর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে বেল টাওয়ার ও গির্জার বাইরের অংশটি আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছেন। নোত্র দামের পুনর্নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। মধ্যযুগীয় এই স্থাপত্যের পুনর্নির্মাণের জন্য প্রচার চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, “আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই স্থাপত্যকে ফের গড়ে তুলব।” অন্য দিকে, ফরাসি ধনকুবের ফ্রাঁসোয়া অরিঁ পিয়ন্ত নোত্র দামের পুনর্নির্মাণে ১০০ মিলিয়ন ইউরো (৭৮৫ কোটি ২৬ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ইমান্যুয়েল গ্রেগয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গির্জার ভিতরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক জিনিসগুলোকে তত্পরতার সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে বেশ কিছু এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কত তা খতিয়ে দেখার জন্য বিভিন্ন দল কাজ করছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। তিনি বলেছেন, ‘দেশবাসীর মতো আমিও এই দৃশ্য দেখে মর্মাহত।’