কাঁধে ঝোলা নিয়ে মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে পড়েন ওঁরা। গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে চেনা-অচেনা নানা বাউল-ফকিরের গান গাইতে গাইতে হেঁটে চলেন। আলখাল্লায় ঢাকা শরীর। মুখে বলিরেখা স্পষ্ট গোপাল বর্মনের। জানালেন, বাউল গান গাইতে বড় ভালবাসেন তিনি। তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না বললেন, আমি কীর্তন দলেও গান করি। সবই তো মাটির গান। হাসতে হাসতে তিনি জানালেন, লোকশিল্পীদের জন্য ভাতার বন্দোবস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও রাজ্য সরকারের তরফে সেই ভাতা পান।
গোপাল খোলবাদক। তাঁরা রাজবংশী। বিন্দোল নামের বর্ডার এলাকার মৌজগাঁয়ে বাড়ি এই লোকশিল্পীদের। টিনের চালার নীচে চায়ের দোকান। হাট বসেছে বিন্দোলে। পাশ দিয়ে কাঞ্চন নদী বয়ে গেছে। জানা গেছে, দেশভাগের আগে বন্দর ছিল এখানে। নোঙর ফেলত পাট ব্যবসায়ীরা। পরে নদীর পাড়ে বসতি গড়ে ওঠে। বন্দরিওয়ালা— অপভ্রংশে বিন্দোল হয়ে যায়। মূলত রাজবংশী আর মুসলিমদের সংখ্যাই এখানে বেশি। রাজবংশীদের মধ্যে বড় অংশই লোকশিল্পী। মমতা লোকশিল্পের প্রসারে এই গোপাল, জ্যোৎস্নাদের জন্যই মাসিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ভোটবাক্সে তারও সুফল মিলবে বলে আশা তৃণমূলের।
মোদীর বিরুদ্ধে স্থায়ী সরকার গড়তে পারে কংগ্রেসই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কথা বোঝাচ্ছেন রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সী। সঙ্গে ছেলে মিছিলও। প্রয়াত প্রিয়রঞ্জনের প্রতি মানুষের সহানুভূতিকে হাতিয়ার করেই লড়ছেন দীপা। আর সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের ভরসা চাকুলিয়া ও হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্র। যা ফব ও সিপিএমের দখলে। সেলিম এলাকার মানুষকে বোঝাচ্ছেন, কেন্দ্রে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মোদীর আমলে কতটা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে মানুষকে।
রায়গঞ্জ কেন্দ্রের বাকি ৫ বিধানসভার মধ্যে রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ কংগ্রেসের দখলে, ইসলামপুর, করণদিঘি ও গোয়ালপোখর তৃণমূলের। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর পুরসভাতেও ক্ষমতায় তৃণমূল। জেলা পরিষদ থেকে পঞ্চায়েত স্তরেও সিংহভাগ তাদের। সবমিলিয়ে ভোটের হাওয়া যে তাঁর পক্ষে ‘অনুকূল’ তা দৃঢ় বিশ্বাস মমতার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের। পেশায় আইনজীবী ও ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল তাই বলেন, ‘বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে উন্নতি যে হয়েছে তা প্রমাণিত। নতুন করে কীই বা বলার আছে? আমি শুধু সেই কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোট চাইছি।’
তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অমল আচার্যের কথায়, ‘অনেকগুলি প্লাস পয়েন্ট আমাদের। যা ভোটবাক্সে এগিয়ে রেখেছে। মমতার উন্নয়ন ভাবনা সমাজের সবস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছেছে। শুধু এটাই বা ভাবছেন কেন, ৪২ আসনই তো আমাদের লক্ষ্য।’ তৃণমূলের ভোটপ্রচারেও তাই উঠে আসছে রায়গঞ্জের নতুন মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের কথা। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক দীপকচন্দ্র বর্মন বলছিলেন, ‘প্রান্তিক মানুষের উন্নতি হলে সমাজেও তার ছাপ পড়ে। যেমন শিল্পীদের আর্থিক সাহায্য তৃণমূল সরকারের বড় পদক্ষেপ নিশ্চয়। সামাজিক উন্নয়নের প্রতিফলনই ভোটে পড়ছে।’